• ২০০২ ভোটার তালিকায় নাম নেই দুই বউয়েরই, সঙ্গিনীদের হারানোর ‘আশঙ্কা’য় মৃত্যু বৃদ্ধের
    প্রতিদিন | ০৭ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: এসআইআর-এ হলে দুই স্ত্রীকে হারানোর আশঙ্কা। শেষ বয়সে একা জীবনযাপন করবেন কীভাবে? সেই ভাবনাতেই কার্যত কাঁটা হয়ে ছিলেন জলপাইগুড়ির বছর ষাটের বৃদ্ধ নরেন্দ্রনাথ রায়। শুক্রবার বাড়ি থেকে সামান্য দূরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। পরিবারের দাবি, এসআইআর আতঙ্কেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

    জলপাইগুড়ির জগন্নাথ কলোনির বাসিন্দা নরেন্দ্রনাথ রায় পেশায় ভ্যানচালক। তাঁর বয়স ৬০ বছর। বঙ্গে এসআইআরের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা পরীক্ষা করেন নরেন্দ্রনাথ। দেখেন, তাঁর নাম থাকলেও দুই স্ত্রী ? মিনতি ও বিনোদিনীর নাম নেই ওই তালিকায়। শেষ বয়সে দুই স্ত্রীকে হারানোর আশঙ্কায় ভুগছিলেন তিনি। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়রা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে নাম না থাকা মানেই বের করে দেওয়া নয়। নতুন করে নাগরিকত্ব প্রমাণের উপায় আছে। আর সেই কারণেই ভোটার তালিকায় এসআইআর হচ্ছে। পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, তিনিও বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু এসব বুঝলেও স্ত্রীদের হারানোর আশঙ্কা থেকে কিছুতেই বেরতে পারছিলেন না নরেন্দ্রনাথ রায়।

    শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে সামান্য দূরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে তদন্তে নেমেছে।

    অন্যদিকে, এসআইআর ‘আতঙ্কে’ এবার সাঁইথিয়াতেও এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর মিলল। তাঁর নাম বিমান পাল। পরিবার সূত্রে খবর, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর ও তাঁর দিদি মল্লিকা পালের পদবি ভুল করে ‘প্রামাণিক’-এর বদলে ‘পাল’ লেখা হয়েছে। এই নিয়েই আতঙ্কিত ছিলেন বিমান। এনিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও এলাকার বিএলও-র সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আশ্বস্ত হতে পারেননি। এর জেরে বুধবার সন্ধ্যায় আচমকা বুকে ব্যথা অনুভব করেন। দ্রুত বিমানবাবুকে তাঁকে সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের ভাই বিধান প্রামাণিক বলেন, “তিনদিন ধরে দাদা খুব চিন্তায় ছিল, কারও সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলত না। এসআইআর আতঙ্কেই ওর মৃত্যু হয়েছে।”

    এসআইআর-এ আতঙ্কে ইতিমধ্যেই রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন দশজনেরও বেশি। এসব ঘটনার নেপথ্যে রাজ্যের শাসকদলের অভিযোগ, বিজেপি আমজনতার মাঝে এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আর গেরুয়া শিবিরের পালটা দাবি, তৃণমূলই এনিয়ে ভয় দেখাচ্ছে, সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। মৃত্যুর নেপথ্যে যতই রাজনৈতিক তরজা হোক না কেন, প্রাণহানির ঘটনা অত্যন্ত অনভিপ্রেত, নিঃসন্দেহে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)