এসআইআর প্রক্রিয়ায় ত্রুটি, মুখ খুললেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
সদ্য শুরু হওয়া এসআইআর নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দেবাশিস সেন। তিনি ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জন প্রক্রিয়ায় সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যে আতঙ্কিত হয়েছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নয়। এজন্য একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। আমার মনে হয়, এর প্রধান কারণ নির্বাচন কমিশন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এসআইআর বোঝার বিষয়ে একটা ফাঁক থেকে গিয়েছে। মানুষকে বোঝানো দরকার, সচেতনতা তৈরি করা দরকার। গতকাল অবধিও একটা ওয়েবসাইট যান্ত্রিক কারণে খুলছিল না। আমার ধারণা, এগুলোও সারিয়ে নেওয়া হবে।’
তবে দেবাশিস সেনও কমিশনের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বলেছেন যে, ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জন নাগরিক স্বার্থেই পালন করা হয়। প্রাক্তন সিইও-র কথায়, ‘নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির প্রয়াসে দুই পক্ষেরই সহযোগী হওয়া প্রয়োজন। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধি আইনের ভিত্তিতে প্রতি ১০ বছর অন্তর ভোটার তালিকা সংশোধন করা প্রয়োজন।’
প্রসঙ্গত, দেবাশিস সেন বৃহস্পতিবার বারাসতে ওয়েলফিনিটি এন্ড স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের আয়োজিত একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বাংলা-সহ দেশের ১২টি রাজ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের ঘোষণা করেছে। তারপর থেকেই সরগরম গোটা পশ্চিমবঙ্গ। রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি রাজ্যে একাধিক মৃত্যুর জন্য নিবিড় পরিমার্জনকে দায়ী করেছেন। আর সেই আবহে এসআইআর নিয়ে রাজ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, কার্যত তা মেনে নিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দেবাশিস সেন।
উল্লেখ্য, দেশের অন্যান্য রাজ্যের থেকে পশ্চিমবঙ্গ ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশ থেকে বার বার স্বৈরাচারী শাসকদের দ্বারা নিপীড়িত সংখ্যালঘুরা গত কয়েক দশক ধরে এ পার বাংলায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে তাঁরা দশকের পর দশক ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অনেকের ছেলে মেয়ে এবং নাতি নাতনিও প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের স্থানীয় সঙ্কীর্ণ রাজনীতির কারণে তাঁরা ২০০২ সালের মধ্যে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেননি। সেই নিয়মের গেরোয় রাজ্যে এসআইআর চালু হওয়ায় এইসব ছিন্নমূল শরণার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অনেক অস্পষ্ট প্রক্রিয়ার জেরে মানুষ গভীর চিন্তায় পড়েছেন। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে রাজ্যে বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। আর সেই আবহে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দেবাশিস সেনের অভিমত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনা বাড়িয়েছে।