মোদী সরকার ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ক্ষোভ উগরে দিলেন সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ। কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ক্ষোভ উগরে দিলেন তমলুকের সাংসদ এবং হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এখন রাজ্যজুড়ে চলছে নির্বাচন কমিশনের এসআইআর কার্যক্রম। সেই প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরেই বিধানসভা নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়বে কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলি। এরকম একটি বিশেষ মুহূর্তে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিতর্কিত মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
সম্প্রতি রাজ্যের একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেন, বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়ানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সরানো। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের জন্য সেই লক্ষ্যের ধারে-কাছে তিনি পৌঁছতে পারেননি। শুধু তাই নয়, তিনি কেন্দ্রীয় এজেন্সি এবং নির্বাচন কমিশনকেও নিশানা করে আক্রমণ শানিয়েছেন।
কিন্তু কেন এই ব্যর্থতা? এই প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বাংলার আবেগকে বিজেপি বুঝতে পারেনি। তিনি মন্তব্য করেন, কেন যে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা শাসনহীন, প্রশাসনহীন রাজ্যে অন্তত ৩৫৫ ধারা জারি করা হবে না, সেটা তো আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন।
প্রাক্তন বিচারপতি বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে রাজ্যের শিক্ষায় নিয়োগ, আরজি কর কাণ্ড-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, শাসকদলের বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে ‘গুচ্ছ গুচ্ছ’ অভিযোগ থাকলেও সে ভাবে তদন্ত বা হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে না। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, সিবিআই, ইডি-র বেশ কিছু ‘বড়-মেজো কর্তা’ বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মদতপুষ্ট। এইসব দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, তা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ‘কৈফিয়ত’ চাওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রাক্তন বিচারপতি।
পাশাপাশি রাজ্যের ক্ষমতা বদলের জন্য কেন্দ্রের কোন পথ অবলম্বন করা উচিত, সেই উপায়ও বাতলে দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বদল করতে চায় না। তিনি মনে করেন, রাজ্যে পালাবদল করতে হলে পুলিশকে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় নিয়ে এসে ভোট করাতে হবে। তা হলেই তৃণমূল ভোট দিতে যাওয়ার সময় কাউকে ‘বাধা’ দিতে পারবে না বা কোনও রকম অশান্তি সৃষ্টি করতে পারবে না। তবে এ সব করলেও যে পরিবর্তন হবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন বিজেপি সাংসদ। তিনি বলেছেন, তারপর যদি তৃণমূল আসে, তো আসবে।
তিনি নির্বাচন কমিশনের উপরেও যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, সম্প্রতি ভোটার তালিকায় ‘গন্ডগোল’ করার জন্য বেশ কয়েকজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। তাঁদের সাসপেন্ড করা হলেও কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করেনি রাজ্য সরকার। তবে তা না-করা হলেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি কমিশন।
তবে শুধু কেন্দ্র এবং এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি। তিনি বাংলায় ‘অবাঙালি’ বিজেপি নেতৃত্বের দাপট নিয়েও বেজায় চটেছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে উত্তর ভারতের চিন্তাভাবনা মেলে না বলেও দাবি করেছেন। তাঁর সাফ নির্দেশ, ‘হিন্দি বলয়’ থেকে নেতা এনে এই রাজ্যে ভোট করানো যাবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন, মেজাজ, তাঁদের অভিমান, এ সব দিল্লিওয়ালা নেতারা বোঝেন না।