• 'আমার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া...'
    ২৪ ঘন্টা | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • অয়ন শর্মা: বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2026) আগে পশ্চিমবঙ্গে SIR প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই বিজেপি-র অস্বস্তি বাড়ালেন, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি (Former justice Abjit Ganguly) তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (BJP MP Abhijit Ganguly)। তাঁর দাবি, বিজেপি তৃণমূলকে (AITC) আদৌ হারাতে চায় কি না, তা-ই গভীর প্রশ্ন। বিজেপির হয়ে লোকসভা ভোটে জিতে সংসদে পৌঁছেছিলেন তিনি, লক্ষ্য ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ক্ষমতা থেকে সরানো। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো দূর, আজ তাঁর মুখেই বিজেপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড়। 

    বৃহস্পতিবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ বলেন, 'আমার বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার এবং তাদের হয়ে ভোটে দাঁড়ানো...আমার উদ্দেশ্য ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার সব রকমের ব্যবস্থা করা হবে। সেই উদ্দেশ্যের ধারেকাছে আজ পর্যন্ত আমি গিয়ে উঠতে পারিনি'।

    এর পরেই তাঁর তীর কেন্দ্রীভূত হয় কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও নির্বাচন কমিশনের দিকে। তাঁর প্রশ্ন, 'কেন পশ্চিমবঙ্গের মতো প্রশাসনহীন রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি করা হবে না (Why is Article 355 not issued), সেটা আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন।'

    অভিজিতের মতে, বিজেপি বাংলার মানসিকতা, আবেগ ও সংস্কৃতিকে বোঝে না। তাঁর তির এবার দলের 'অবাঙালি নেতৃত্ব'-এর দিকেও। বলেন, 'হিন্দি বলয় থেকে নেতা এনে এখানে ভোট করানো যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন, মেজাজ, অভিমান— এসব দিল্লিওয়ালা নেতারা বোঝেন না।'

    শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি, আরজি কর কাণ্ড-সহ একাধিক মামলায় সিবিআই-ইডি-র ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিজিৎ। তাঁর অভিযোগ, 'বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ থাকলেও, তদন্ত বা হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে না। কিছু এজেন্সির কর্তা বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট।'

    নির্বাচন কমিশন নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'ভোটার তালিকায় গন্ডগোলের জন্য যাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি রাজ্য সরকার। অথচ কমিশন চুপ করে আছে।'

    অভিজিৎ আরও বলেন, যখন সাংবাদিকের প্রশ্নে অভিজিৎ বলেন, 'বিজেপি তৃণমূলকে সরাতে চায় কি চায় না, এটা অনেক গভীর প্রশ্ন। আজ সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। কিছু দিন বাদে হয়তো যাব।'

    সেখানেই থামেননি অভিজিৎ। বরং তিনি আরও বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাকশন দেখে আমার মনে হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের এই যে পরিস্থিতি, তাকে বদল করতে চায় না। কেন্দ্রীয় সরকার যদি পরিস্থিতি বদল করতে না চায়, তাহলে সেই বদল হবে না। কেন যে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা শাসনহীন, প্রশাসনহীন রাজ্যে অন্তত ৩৫৫ ধারা জারি করা হবে না, সেটা তো আমার কাছে একটা বিরাট প্রশ্ন।'

    ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর, প্রচারে হিন্দিভাষী নেতাদের উপর জোর দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি-র একাংশ। এবার ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বা আগে হিন্দি বলয়ের নেতাদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন অভিজিৎ। তাঁর বক্তব্য, 'এই হিন্দি বলয় থেকে এখানে নেতা এনে ভোট করানো যাবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন, মেজাজ, তাদের অভিমান, এসব দিল্লিওয়ালা নেতারা বোঝেন না। পশ্চিমবঙ্গ একটি সম্পূর্ণ আলাদা জায়গা। পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, তাদের চিন্তাভাবনা, তা বাকি ভারত, অন্তত উত্তর ভারতের সঙ্গে অন্তত মিলবে না। দক্ষিণ ভারতের কথা আমি বলতে পারব না। তাই সেখান থেকে নেতা পাঠিয়ে, ভোট করিয়ে, জিতিয়ে বেরিয়ে যাব, এটা অবাস্তব চিন্তাভাবনা। এসব করে কিছু হবে না। বরং পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেটা দেখতে চায়...যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দাও। পুলিসকে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় নিয়ে এসো। তার পর ভোট করো গণতান্ত্রিক ভাবে। মানুষ ভোট দিতে যাক। যেখানে তৃণমূলের বাঁদর-বাচ্চার লাফালাফি করে তাদের আটকাবে না, সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে না। সেই অবস্থায় ভোট হোক। তার পর যদি তৃণমূল আসে আসবে।'

    তাঁর বক্তব্য, 'গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ তাদের বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে। একটাও তদন্ত হচ্ছে! একজনকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে? কিসসু করা হচ্ছে না। সিবিআই এবং ইডি আজ তো আমার মনে হয়, এত দিন লক্ষ্য করে মনে হয়, সিবিআই এবং ইডি-র বেশ কিছু বড় এবং মেজো কর্তা তারা বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট হয়ে, কংগ্রেস বা অন্য কোনও দল দ্বারা প্রভাবিত তারা যে, 'এগুলো কোরও না! করার দরকার নেই'? কেন করছেন না। আমি প্রবীণ সুদ, সিবিআই ডিরেক্টরকে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ব্যাখ্যা দিন। কেন করা হল না? অভয়া মামলা থেকে, রাজীব কুমার মামলা, শিক্ষা দুর্নীতি, আমি বহু উদাহরণ এখনই দিয়ে দিতে পারি।'

    এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ চূড়ান্ত কটাক্ষ করেছেন তমলুকের সাংসদকে। তিনি বলেন- 'অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মরীচিকার পিছনে ছুটেছেন। নিজে তাঁর দলের প্রতি কেন এত অবসাদ? কেন হতাশা তা উনি নিজেই বলতে পারবেন। বিশ্বাস আস্থা কেন তৈরী হচ্ছে না দলের প্রতি তাঁর?'

    উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন শিক্ষা দুর্নীতির বিভিন্ন মামলায় অভিজিতের একাধিক রায় গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বিজেপি-র সাংসদ অভিজিৎ সেই কেন্দ্রীয় সংস্থার ভূমিকায় সন্দেহ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন। 

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)