‘স্বপ্নভঙ্গ-বিভ্রান্তিতে ভুগছেন’, দল নিয়ে ‘হতাশা’য় অভিজিৎকে নিশানা তৃণমূলের
প্রতিদিন | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বছর ঘুরতেই ‘বেসুরো’ সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজের দল, কেন্দ্রের মোদি সরকার এবং নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে হতাশার সুর তাঁর কথায়। যা নিয়ে বিজেপিতে শুরু হয়েছে শোরগোল। অস্বস্তিতে বিজেপির রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় নেতারাও। বৃহস্পতিবার এক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলায় এসে দলের অবাঙালি নেতাদের প্রচারের বিরোধিতা করে বিস্ফোরক কথা বলেন অভিজিৎ। উত্তর ভারতের সঙ্গে বাংলার মানুষের ভাবনাচিন্তা মেলে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘হিন্দি বলয় থেকে নেতাদের এনে এখানে (বাংলায়) ভোট করানো যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন, মেজাজ, তাঁদের অভিমান, এসব দিল্লিওয়ালা নেতারা বোঝেন না।’’ প্রাক্তন বিচারপতির গলায় এহেন হতাশা, বিরক্তি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, বাংলায় দল চালানো থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারের রাশ থাকে বিজেপির অবাঙালি কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতেই। দলের পর্যবেক্ষকরাও ভিন রাজ্যের। এটাই বিজেপির দলীয় নিয়ম। কিন্তু এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলায় তাদের আসার বিরোধিতা করে সরাসরি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকেই আঙুল তুলেছেন তমলুকের সাংসদ। তঁার এই মন্তব্য ভালভাবে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ছাব্বিশের ভোটের আগে তা দলের বিরুদ্ধেই যাবে বলে মত গেরুয়া শিবিরের বড় অংশের। দলের একাংশের কথায়, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পার্টির কেউ ছিলেন না, তিনি বিচারপতি ছিলেন। অন্য পেশার লোক। তিনি যেসব পার্টি-বিরোধী কথা বলছেন, তার দায় তাঁকে যাঁরা দলে যোগদান করিয়েছিলেন, সেই নেতাদেরই নিতে হবে বলে গেরুয়া শিবিরের এক আদি নেতার বক্তব্য। উল্লেখ্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উদ্যোগেই বিজেপিতে যোগ দেন প্রাক্তন বিচারপতি। বিজেপি-র পক্ষে তৃণমূলকে সরানো সম্ভব নয়, না কি বিজেপি তৃণমূলকে সরাতে চায় না, এই প্রশ্নের জবাবে অভিজিৎ বলেছেন, ‘‘বিজেপি সরাতে চায় কি চায় না-এটা অনেক গভীর প্রশ্ন। সেই প্রশ্নে আজ যাব না।’’ তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য ‘‘কিছু দিন বাদে হয়তো যাব।’’
প্রাক্তন বিচারপতির গলায় এহেন হতাশা, বিরক্তি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিচারপতির চাকরি ছেড়ে মরীচিকার পিছনে দৌড়ে আজ অভিজিৎবাবু স্বপ্নভঙ্গ-বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। বিজেপি বাংলায় চক্রান্ত করেও তৃণমূলকে হারাতে পারেনি, পারছে না, পারবেও না। সেই জায়গায় গিয়ে তঁার দলের প্রতি এই অবসাদ, হতাশা ও এমন মূল্যায়ন তৈরি হয়। দলের প্রতি বিশ্বাস-আস্থা কেন তৈরি হচ্ছে না, সেটা তাঁর ব্যাপার।’’ কুণালের কথায়, ‘‘বিচারপতি থাকাকালীন অভিজিৎবাবুর হয়তো মনে হয়েছিল চাকরি ছেড়ে তিনি বিজেপিতে এসে ভোটে জিতলে তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করবে। কিন্তু দল তা করেনি। বিজেপি অভিজিৎবাবুর ইমেজ ধুলিস্যাত করে তাঁকে সাধারণ সাংসদে পরিণত করেছে।’’ রাজ্যে তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ধারে কাছে তিনি পৌঁছতে না পারার দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপিয়ে তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বদল করতে চায় না। তাঁর অভিমত, রাজ্যে পালাবদল করতে হলে পুলিশকে কেন্দ্রের আওতায় নিয়ে এসে ভোট করাতে হবে। তবে এ সব করলেও যে পরিবর্তন হবেই, সে সম্পর্কেও তিনি নিশ্চিত নন। রাজ্যে বিভিন্ন তদন্তে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ জানান তিনি। নির্বাচন কমিশনের ‘কাজকর্ম’ নিয়েও ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেছেন অভিজিৎ।