• ‘এসআইআর আতঙ্কের’ বলি শেওড়াফুলির যৌনকর্মী! মৃত্যু আরও তিন জেলায়, কারও নাম নেই তালিকায়, কারও বানান ভুল
    আনন্দবাজার | ০৭ নভেম্বর ২০২৫
  • এসআইআর-রাজনীতি অব্যাহত একের পর এক মৃত্যু ঘিরে। শুক্রবার হুগলির শেওড়াফুলিতে এক যৌনকর্মীর অপমৃত্যুতে ফের আঙুল উঠল ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার দিকে। এ ছাড়া আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে তিন জেলায়। অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় কারও নামের বানান ভুল। কারও আবার নামই নেই। এ সব নিয়ে দুশ্চিন্তা করেই কেউ আত্মহত্যা করেছেন। কারও আবার মৃত্যু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে।

    শুক্রবার শেওড়াফুলি স্টেশন লাগোয়া গড়বাগান যৌনপল্লির বাসিন্দা বিতি দাসের (৪৯) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পড়শিদের দাবি, সকাল থেকেই বিতির সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই তাঁরা পুলিশে খবর দেন। এর পর পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তাঁর দেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চাঁপদানির বিধায়ক তথা হুগলির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরিন্দম গুঁইন, বৈদ্যবাটির পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো। অরিন্দমের অভিযোগ, ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম ছিল না বিতির। তা নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন তিনি। স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘প্রায় ৩০ বছর ধরে এই যৌনপল্লিতে ছিলেন বিতি। ওঁর স্বামীও আছে। এসআইআর ফর্ম দিয়ে গিয়েছিল। তার পরেই এই ঘটনা।’’

    যদিও বিতির মৃত্যু এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের কারণে, না কি এর নেপথ্যে অন্য কারণ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। যৌনপল্লির আর এক বাসিন্দা জানান, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল। ছেলেকে নিয়ে চলে যান স্বামী। তার পর আজ সকালে বিতির দেহ পাওয়া গেল।’’

    তৃণমূলের বিরুদ্ধে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে বিজেপির নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘এরা যে কোনও মৃত্যুকেই এসআইএর আতঙ্কে বলে চালাতে চাইছে। পারিবারিক অশান্তি, ঝগড়া থেকে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেও এসআইআর বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এ সব করে লাভ হবে না। এসআইআর হচ্ছে। হবে। ভুয়ো ভোটার, মৃত ভোটারের নাম বাদ যাবে।’’

    এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি, বীরভূমের সাঁইথিয়া এবং জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে। কুলপিতে ঢোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীচরণপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন পাইক (৪৫)-এর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের ও স্ত্রীর নাম না-থাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই চিন্তিত ছিলেন শাহাবুদ্দিন। উপরন্তু, স্ত্রীর নথিতে গরমিল ধরা পড়ায় আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। এ সবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকালে হৃদ্‌‌রোগে আক্রান্ত হন শাহাবুদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় ডায়মন্ড হারবার গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। সেখানেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়।

    শাহাবুদ্দিনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাসপাতালে পৌঁছোন কুলপি বিধানসভার বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার ও মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার। তাঁরা পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান ও সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। যোগরঞ্জন এবং বাপির বক্তব্য, এসআইআর নিয়ে রাজ্য জুড়ে মানুষ বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত। ইতিমধ্যেই এই আতঙ্কে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর সম্পূর্ণ দায় কেন্দ্র সরকার ও নির্বাচন কমিশনের।

    সাঁইথিয়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৪ নম্বর পার্টের বাসিন্দা বিমান প্রামাণিকের মৃত্যুও এসআইআর আতঙ্কের কারণে হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। পরিবার সূত্রে খবর, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর ও তাঁর দিদি মল্লিকার পদবি ‘পাল’ লেখা হয়েছে ‘প্রামাণিক’-এর বদলে। এ নিয়েই আতঙ্কিত ছিলেন বিমান। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর ও এলাকার বিএলও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অভিযোগ, আশ্বাস পেলেও উদ্বেগ কাটেনি তাঁর।

    বুধবার সন্ধ্যায় আচমকা বুকে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত তাঁকে সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতের ভাই বিধান প্রামাণিক বলেন, “তিন দিন ধরে দাদা খুব চিন্তায় ছিল, কারও সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলত না। এসআইআর আতঙ্কেই ওর মৃত্যু।”

    ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পিনাকীলাল দত্ত বলেন, “ও একাধিক বার আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। আমি আশ্বস্ত করেছিলাম, কিন্তু ভীষণ আতঙ্কে ছিল। এই ভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

    জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি মহকুমার অন্তর্গত বারঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ডাঙা পাড়ার বাসিন্দা লালুরাম বর্মণের মৃত্যু হয় শুক্রবার। পরিবারের দাবি, লালুরামের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিএলও। তাঁকে এনুমারেশন ফর্মও দিয়ে এসেছিলেন। ঘটনাচক্রে, তার পরেই লালুরাম আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)