আরজি করের সন্দীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা সেই আখতারকে সাসপেন্ড করল সরকার! অভিযোগ দুর্নীতিরই
আনন্দবাজার | ০৭ নভেম্বর ২০২৫
আরজি কর কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই আখতার আলিই কি দুর্নীতিতে জড়িত? শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতর সিবিআই তদন্তের কথা উল্লেখ করে আখতারকে সাসপেন্ড করল।
কেন আখতার আলিকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। জানানো হয়েছে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই। সেই তদন্তে পরবর্তী সময়ে আখতারের ভূমিকা উঠে এসেছে। আরজি করের তৎকালীন সহকারী সুপার হিসাবে আখতার হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাবেচার তদারক করতেন। পরে ডেপুটি সুপার হিসাবে এই সব ব্যাপারে নিজের প্রভাব খাটাতেন। এমনই তথ্য পেয়েছে সিবিআই, দাবি স্বাস্থ্য দফতরের।
স্বাস্থ্য দফতর আরও জানিয়েছে, হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাবেচার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এক সংস্থাকে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে লক্ষাধিক টাকা দাবি করেন আখতার। শুধু তা-ই নয়, ২০২০-২২ সালের মধ্যে আখতারের অ্যাকাউন্টে দু’লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা ঢুকেছে। এ ছাড়া, তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টেও ৫০ হাজার টাকা ঢুকেছিল সেই সময়। পাশাপাশি, নিজের এবং পরিবারের বিমানযাত্রার ক্ষেত্রেও সুবিধা নিয়েছেন আরজি করের তৎকালীন ডেপুটি সুপার। এই সব বিষয় খতিয়ে দেখার পরই তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য দফতর। যদিও এ ব্যাপারে আখতারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে যে অভিযোগে সাসপেন্ড করা হল, সেই সংক্রান্ত সিবিআই বা আদালতের কোনও নথি আমি পাইনি। এ ব্যাপারে আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনিও জানান, তাঁর কাছেও এই সংক্রান্ত কোনও নথি নেই। তবুও রাজ্য সরকার বা স্বাস্থ্য দফতর কেন এই পদক্ষেপ করেছে, তার স্পষ্ট উত্তর আমার কাছে নেই। দিন কয়েকের মধ্যেই আমি এ ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নিয়ে জানাব কী করব।’’ এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্ত চাইছি। এক জন ডেপুটি সুপার (নন-মেডিক্যাল) যদি কোনও রকম নিয়ম বহির্ভূত কাজ করে থাকেন তা হলে স্বাস্থ্যভবন বা উচ্চপদস্থ কর্তারা কি কিছুই জানতেন না? যাঁরাই জড়িত থাকুক তাঁদের নাম প্রকাশিত হোক।’’
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই হাসপাতালেরই তৎকালীন ডেপুটি সুপার আখতার। ২০২৩ সালে সেই অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে আরজি কর থেকে তাঁকে বদলি করে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে ডেপুটি সুপার (নন-মেডিক্যাল) পদে কিছু দিন কাজ করেন আখতার। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাঁকে আবার বদলি করে পাঠানো হয় উত্তর দিনাজপুরে। সেখানকার কালিয়াগঞ্জ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার পদে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। জানা গিয়েছিল সম্প্রতি তিনি নাকি সেই পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দেন। তবে তাঁর সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা হয়নি। পরিবর্তে এ বার আখতারকে সাসপেন্ড করল স্বাস্থ্য দফতর।