বাণিজ্যিক কাজে যুক্ত ব্যক্তিগত বাইকেই দুর্ঘটনা বেশি উৎসবের সময়ে
আনন্দবাজার | ০৭ নভেম্বর ২০২৫
কিছু ঘটলে বা উৎসব এলে আলোচনা হয়, তার পরে যে কে সেই! সরকারি কর্তাদের দফায় দফায় বৈঠক হয়, কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। কিন্তু, কাজেরকাজ হয় কি? নম্বর প্লেট বদলের শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে সাত মাস কেটে গেলেও এখনও ব্যক্তিগত নম্বর প্লেট লাগানো মোটরবাইক বা স্কুটার বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার বন্ধ না হওয়ায় এই প্রশ্নই উঠতেশুরু করেছে। এ নিয়ে প্রশাসনের কোনও স্তর থেকেই নির্দিষ্ট উত্তর মিলছে না। এরই মধ্যে সামনেআসছে একের পর এক ভয় ধরানো তথ্য।
পুলিশ সূত্রের খবর, উৎসবের মরসুমে দুর্ঘটনার পর্যালোচনা করতে গিয়ে তারা দেখেছে, ওই সময়ের মধ্যে যত ব্যক্তিগত বাইক বা স্কুটার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, সেগুলির বড় অংশই অ্যাপ নির্ভর সংস্থায় ব্যবহার হচ্ছিল।মোট আহত এবং মৃতের মধ্যেও সিংহভাগ যুক্ত ছিলেন অ্যাপ নির্ভর সংস্থায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, চলতি বছরে উৎসবের মরসুমে মোটরবাইকদুর্ঘটনার হার গত বারের থেকে প্রায় আট শতাংশ বেড়েছে। অ্যাপ নির্ভর সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে, এমন মোটরবাইক বা স্কুটারের সংখ্যা গত দু’বছরের তুলনায় বেড়েছে ২৫ শতাংশ।চলতি বছরের উৎসবের মধ্যে কলকাতায় দুর্ঘটনায় পড়া এমন বাইক বা স্কুটারের সংখ্যা সাড়ে ছশো। তাঁদের মধ্যে আহত হয়ে এখনও কাজে ফিরতে পারেননি ৪৮০ জন। মৃত্যু হয়েছে৩২ জনের। পুলিশের অনুমান, ন্যূনতম প্রাপ্যের নিশ্চয়তা নেই, অথচ উপরি আয়ের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে অনেকেই গতির তুফানতুলে বাইক বা স্কুটার ছোটাচ্ছেন। পুজোর মধ্যে এমন ভাবে বাইক ও স্কুটার চালাতে গিয়ে কেউ ঢুকে গিয়েছেন লরির নীচে,কেউ রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে উড়ালপুল থেকে নীচে পড়েছেন। বেপরোয়াভাবে ছুটতে গিয়ে পথচারীকে ধাক্কা মারার ঘটনাও ঘটেছেএকাধিক।
প্রসঙ্গত, অ্যাপ-নির্ভর সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি নতুন নয়। হলুদ নম্বরপ্লেটবিহীন গাড়ি বা মোটরবাইক বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করলে আয় হয় না সরকারেরও। তাই রাজ্য পরিবহণ দফতর এক নির্দেশে বলেছিল, যাঁরা ব্যক্তিগতবাইক বা স্কুটার বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছেন, তাঁদের হলুদ নম্বর প্লেট পেতে হলে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে (আরটিও)আয়োজিত সরকারি শিবিরে আবেদন করতে হবে। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট, পাঁচ বছরের জন্য কলকাতা ও পার্শ্ববর্তীপাঁচটি জেলা মিলিয়ে পারমিটের খরচ, হলুদ নম্বর প্লেট লাগানোর খরচ-সহ কয়েকটি ধাপে কম-বেশি ২৬০০ টাকা দিলেই বাণিজ্যিক নম্বরপ্লেট মিলবে। কিন্তু বার বার এমন শিবির করেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। শেষমেশ হুঁশিয়ারির সুরে সরকার জানায়, চলতিবছরের পয়লা এপ্রিল থেকে ব্যক্তিগত নম্বর প্লেট নিয়ে বাণিজ্যিক কাজ করলেই কড়া পদক্ষেপকরা হবে।
এরই মধ্যে ‘মোটর ভেহিক্ল এগ্রিগেটর গাইডলাইন, ২০২৫’ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার।তাতে জানানো হয়, অ্যাপ-নির্ভর সংস্থাগুলি এমন গাড়ি বা বাইকচালকদের ভাড়া পেতে সাহায্য করলে সেই টাকার কিছু অংশ রাজ্য সরকার দাবি করতেপারে। সূত্রের দাবি, এর পরেই ঠিক হয়, এমন নিয়মভঙ্গকারী গাড়ি বা মোটরবাইকের প্রতিটি ‘রাইড’-এর (এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাত্রীকে পৌঁছে দেওয়ার বরাত) মোট ভাড়ার উপরে ছ’শতাংশ বাড়তি কর হিসাবে নেবেসরকার। কিন্তু অভিযোগ, তেমন কোনও কড়া পদক্ষেপই এর পরে করা হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি। ‘কলকাতা সাবার্বান বাইক-ট্যাক্সি অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি শান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘যাঁরানিয়ম মেনে নম্বর প্লেট বদলালেন, তাঁরা দেখছেন কিছু না করেও পার পেয়ে যাওয়া যাচ্ছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘অ্যাপ-নির্ভর সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলেন্যূনতম প্রাপ্য নিশ্চিত করা যাবে না। উপরি আয়ের পথে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটবেই।’’