• ‘SIR’-এর আতঙ্ক, রাতের ঘুম উড়েছে ওপার বাংলার কাজলের
    এই সময় | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • পুলক বেরা, তমলুক

    'বাঘের ভয়ে উঠলাম গাছে, বাঘ বলে পেয়েছি কাছে!'

    চালু প্রবাদটা যে এ ভাবে তাঁর জীবনেও বর্ণে বর্ণে সত্যি হয়ে যাবে, ভাবতে পারেননি কাজল হালদার। রাজ্যে সার-এর (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকেই রাতের ঘুম উড়েছে তাঁর। তিনি বলছেন, 'সবাই বলছে, বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে তাদের নাকি আর এই রাজ্যে থাকতে দেবে না। আমার সব কাগজপত্র এখানকার। কিন্তু মা তো বাংলাদেশে থাকে। ওদের নথি আমি কোথা থেকে দেবো? মেয়ে, নাতি-নাতনি, সংসার ছেড়ে কোথায় যাব বলুন তো!'

    কাজল আদতে বাংলাদেশের বরিশালের মেয়ে। তাঁর দাবি, ১৯৯৮ সালে তাঁদের গ্রামে খুব অশান্তি শুরু হয়। তখন তাঁর বয়স ১৫ বছর। দালাল মারফত তিনি এ-পার বাংলার সুন্দরবনে এসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কাজল বলছেন, 'সে সময়ে আমাদের এলাকায় মহিলাদের উপরে চরম অত্যাচার চলছিল। প্রাণ বাঁচাতে বাবা-ই আমাকে এ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন।'

    জানা গিয়েছে, সুন্দরবনে কিছু দিন থাকার পরে কাজল চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতার একটি কারখানায় কাজ শুরু করেন। সেখানেই পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের যুবক কার্তিক করের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তারপরে প্রণয় ও পরিণয়। পরে কাজলের বাবা বাংলাদেশ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে নিতেও এসেছিলেন। কিন্তু বিয়ে করে ফেলায় তিনি আর বাড়ি ফিরে যাননি।

    ২০০৩-এ ভোটার তালিকায় নাম ওঠে কাজলের। বর্তমানে তাঁর কাছে আধার, ভোটার, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট- সবই রয়েছে। রেশন থেকে শুরু করে লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও পাচ্ছেন। তাঁর মেয়ে ও নাতনিও এ রাজ্যেই বাস করেন। কিন্তু ২০০২-এর ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই।

    কাজলের স্বামী কার্তিক কর বলছেন, 'আমরা ২০০০-এ বিয়ে করেছিলাম। তখন এত তথ্যের প্রয়োজন পড়ত না। তাই ২০০৩-এ সহজেই ভোটার তালিকায় নাম উঠেছিল কাজলের। তারপর থেকে নিয়মিত ভোট দিচ্ছে। এমনকী, ভিসা নিয়ে বাংলাদেশেও গিয়েছে। কিন্তু সার-এর কথা শোনার পর থেকেই ও খুব আতঙ্কে আছে।'

    নন্দকুমারের বিডিও দীনেশ দে বলেন, 'সবে তো এনিউমারেশন ফর্ম দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে, ওই মহিলার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের যা নির্দেশিকা রয়েছে সেই সব নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তমলুক সংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত রায় বলেন, 'প্রতিটি এলাকায় আমাদের লোকজন সহযোগিতা করছে। ওই মহিলার পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে তাঁকে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করা হবে।'

    আর বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মলয় সিনহার কথায়, 'কোনও অবস্থাতেই কোনও হিন্দুর নাম বাদ যাবে না। যাঁরা বাংলাদেশে অত্যাচারের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে এসেছেন, তাঁরা নির্দিষ্ট আইন মেনে এ দেশে থাকতে পারবেন।'

  • Link to this news (এই সময়)