• ‘মাওবাদী আতঙ্ক’ অতীত, মুঙ্গেরের ভীমবন্ধে দীর্ঘ ২০ বছর পর ভোটগ্রহণ কেন্দ্র
    বর্তমান | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু, পাটনা: মুঙ্গের! দেশি কাট্টা বা হ্যান্ড মেড বেআইনি বন্দুকের ‘হাব’ হিসেবেই বিহারের এই জেলাকে চেনে দেশবাসী। কিন্তু এই মুঙ্গেরের আরও একটা পরিচিতি আছে। একসময় এই মুঙ্গেরই ছিল মাওবাদীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। বিহারের মাওবাদী ইতিহাসে অন্যতম সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল এই মুঙ্গের জেলার ভীমবন্ধ এলাকায়।

    ঘটনাটি ২০০৫ সালের। নির্বাচনের ঠিক আগে মাওবাদীদের ডেরার খোঁজে মুঙ্গের থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরে ভীমবন্ধের কাছে লক্ষ্মীপুর জঙ্গলে হানা দিয়েছিলেন মুঙ্গেরের পুলিশ সুপার কে সি সুরেন্দ্র বাবু। জঙ্গলের রাস্তায় এসপির গাড়ি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। সুরেন্দ্র বাবু সহ মোট সাত পুলিশ অফিসারের মৃত্যু হয় ওই বিস্ফোরণে। মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্তের কারণে ২০০৫ সালে ভীমবন্ধ এলাকায় ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন। সেই ঘটনার পর থেকে ভীমবন্ধে আর কোনও ভোটকেন্দ্র রাখতে সাহস পায়নি কমিশন। 

    ২০ বছর পর, ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের খুলল সেই ভোটকেন্দ্র। এবারের নির্বাচনে ভীমবন্ধে ভোট করাটা কমিশনের কাছে ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ ভীমবন্ধ মুঙ্গেরের তারাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। আর এই কেন্দ্র থেকেই এবার নির্বাচনে লড়ছেন বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় ভোট দিতে পেরে স্বাভাবিকভাবেই খুশি ভীমবন্ধের ভোটাররা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

    ভীমবন্ধ এলাকায় মোট সাতটি ভোটকেন্দ্র। ২০০৫ সালে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের ঘটনার পর ওই সাতটি ভোটকেন্দ্রই ১৬ কিলোমিটার দূরে গেহাট ও গান্টা এলাকায় স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল কমিশন। প্রত্যন্ত জঙ্গল, যাতায়াতের অসুবিধা আর মাওবাদীদের ভীতির কারণে এই এলাকার মানুষজন ভোট দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনের আগে এই এলাকায় তুমুল প্রচার চালিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তরফে ভোটারদেরকে সবরকমভাবে আশ্বস্তও করা হয়েছিল।

    ভোটের দিন ভীমবন্ধের সাতটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল বিশাল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী। কমিশন আরও জানিয়েছে, বনদপ্তরের রেস্ট হাউসের কাছে ৩০৭ নম্বর বুথে ৩৭৪ জন ভোটারের (যার মধ্যে ১৭০ জন মহিলা) সিংহভাগই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন। সিআরপিএফের ডিআইজি সন্দীপ সিং জানিয়েছেন, দীর্ঘ কুড়ি বছর পর এখানে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটার ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মাওবাদী অধ্যুষিত এই এলাকায় আধা সেনার একাধিক অভিযান মানুষকে ভয়মুক্ত করেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)