নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: এসআইআর চালু হতেই কোচবিহারের সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। একে তো নিজেদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই। তারউপর ছিটের যে সমস্ত মেয়েদের বাইরে বিয়ে হয়েছে তাঁদের নামইবা কিভাবে তালিকায় পাওয়া যাবে? কারণ ২০১৫ সালে ছিটের বাসিন্দারা ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রথমে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করেননি। এবার প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে নিজেরা যেমন ফর্ম পূরণে রাজি হয়েছেন, তেমনই এলাকার বিয়ে হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া মেয়েদের নামের তালিকাও তাঁরা প্রশাসনের হাতে তুলে দিলেন। যাতে ওই সমস্ত বিবাহিত মেয়েরা নিজেদের বর্তমান ঠিকানায় থেকেই এসআইআর ফর্ম পূরণ করতে পারেন।
শুক্রবার সাবেক বাংলাদেশি ছিট পোয়াতুরকুঠির বাসিন্দা সাদ্দাম মিঁয়া বলেন, জেলাশাসকের দপ্তরে এসে অতিরিক্ত জেলাশাসকের (সাধারণ) সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বিধানসভা এলাকার বাইরে যে সমস্ত মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তাঁদের প্রসঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। সেখানকার বিএলওরা কি করে বুঝবেন যে তাঁরা ছিট মহলের মেয়ে? সেই কারণেই আমরা সেই নথি দিতে এসেছিলাম। আমরা বিস্তারিত তথ্য তুলেদিলাম। বাইরের এলাকায় যে সমস্ত বিএলও আছেন তাঁদের এই প্রসঙ্গে জানিয়ে দিলে সুবিধা হবে। যাতে তাঁরা এসআইআর ফর্ম পূরণ করতে পারেন। এডিএম আশ্বস্ত করেছেন, ছিটমহলের ওই সমস্ত বিবাহিত মেয়েদের বাবার পরিচয় দিয়েই এসআইআর সম্পন্ন হবে। ৫১টি ছিটমহলের প্রায় দেড় হাজার এমন বিবাহিত মেয়ে রয়েছে। আমরা ১৪ হাজার ছিটমহলবাসী আতঙ্কে ছিলাম। সকলেই আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ফর্মে এনক্লেভ কথাটি লিখে দিলেই হবে। আমাদের আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গিয়েছে। সাবেক ছিটের আরএক বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, আমরা এদিন প্রায় দেড় হাজার বোনেদের নথি প্রশাসনের হাতে তুলে দিলাম।
মোট ৫১টি ছিটের মধ্যে কোচবিহারে পোয়াতুরকুঠি, মশালডাঙা, দক্ষিণ মশালডাঙা, বাত্রিগাছ, করলা প্রভৃতি সাবেক ছিট রয়েছে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি জেলায় কিছু সাবেক ছিটমহল রয়েছে। দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের পর ২০১৫ সালে এই ছিটমহলগুলি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় এঁদের কারও নাম নেই। ওসব এলাকার বহু মেয়ে বাইরে বিয়ে হয়ে চলে গিয়েছেন। তাঁরাইবা কিভাবে ভোটার তালিকায় নাম তুলবেন, এসব প্রশ্ন সামনে আসে। এই আবহেই বৃহস্পতিবার কোচবিহারে নির্বাচন কমিশনের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা বৈঠক করে গিয়েছেন। তারপরেই শুক্রবার প্রশাসনের কাছে সাবেক ছিটমহলের বিবাহিত মেয়েদের নথি তুলে দিলেন সেখানকার বাসিন্দারা।