• নলহাটি জংশন সংলগ্ন পাঁচশো পরিবারকে নিরাশ্রয় করল রেল
    বর্তমান | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: এসআইআরের কাগজপত্র জোগাড় করা নিয়ে যখন দিশেহারা মানুষগুলো তখনই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দিল অমানবিক রেল। নলহাটিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০০ পরিবারকে নিরাশ্রয় করল। হাতজোড় থেকে কাকুতিমিনতি কিছুতেই কিছু লাভ হল না বসবাসকারীদের। বিধায়কের অনুরোধকেও উপেক্ষা করে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল একের পর এক বাড়ি। শীতের শুরুতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশেহারা বাসিন্দারা। 

    নলহাটি জংশনের কাছেই সাহেববাগান পাড়ায় প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি বসবাস করে আসছিলেন প্রায় পাঁচশো পরিবার। সবমিলিয়ে প্রায় তিন হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে ভোটার প্রায় ১৫০০। এদের কেউ পরিচারিকার কাজ করেন, কেউ বা হকার। আবার কেউ স্থানীয় দোকানে দিনমজুরের কাজ করে কোনওরকমে দিন গুজরান করেন। এর আগে গত ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে জায়গা খালি করে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছিল রেল। সেই সময়ে বসবাসকারীরা নিজেদের অসহায়তার কথা তুলে ধরে ছটপুজো পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন। তার মধ্যে স্বেচ্ছায় সরে যাবেন বলে লিখিতও দেন। সেই আবেদনে সাড়া দেয় রেল।

    ছটপুজো শেষ হতেই শুক্রবার আচমকা প্রচুর ফোর্স, বুলডোজার নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামে রেল। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কিছু পরিবার অন্যত্র সরে গিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ পরিবার নিরুপায় হয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে সেখানে বসবাস করছিল। তাঁরা এদিন হাতজোর করে বলেন, এখনও বিকল্প বাসস্থান খুঁজে পাইনি। পাঁচহাজার টাকা বাড়ি ভাড়া চাইছে। স্বল্প আয়ে সেই ভাড়া দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়। তাই আরও কিছুদিন সময় চেয়ে অনুরোধ জানান। খবর পেয়ে সেখানে আসেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিং। তিনিও বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার জন্য আরও কিছুদিন সময় দেওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে বুলডোজার দিয়ে একের পর এক বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। চোখের সামনে তিল তিল করে গড়ে তোলা মাথা গোঁজার ঠাঁই শেষ হতে দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বসবাসকারী কালু শেখ বলেন, রেল আমাদের সময় দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এখনও বিকল্প বাসস্থান পাইনি। পাঁচ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া চাইছে। দিনমজুরের কাজ করে এত টাকা দিয়ে থাকতে পারব না। লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে জায়গা কিনে বাড়ি করাও সম্ভব নয়। তাই আরও কিছুটা সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা শুনল না। বাড়ি ভেঙে দিল। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাব। শিশু কোলে অঝোরে কেঁদে চলেছেন পেশায় পরিচারিকা আনু বিবি। তিনি বলেন, শীতের এই সময়ে দুধের শিশু নিয়ে কোথায় যাব। 

    উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দাদের অনেকেই বলেন, এখন এসআইআর চলছে। কাগজপত্র জোগাড় করার চিন্তা রয়েছে। তার মধ্যেই উচ্ছেদ করা হল। বিএলওরা এখানে এসে আমাদের দেখা না পেয়ে ঘুরে যাবেন। বাড়ি কেড়ে নিল। এবার নাগরিকত্বও কেড়ে নিতে চাইছে কেন্দ্র সরকার।  বিধায়ক বলেন, রেল কোনও কথা শুনল না। সব বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল। অসহায় মানুষগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ল। যদিও রেলের এক আধিকারিক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই উচ্ছেদ অভিযান। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তাছড়া ওদের সরে যাওয়ার জন্য চারমাস সময় দেওয়া হয়েছিল।  উচ্ছেদ স্থগিত রাখার আর্জি জানাচ্ছেন বিধয়াক রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিং। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)