সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবদ্বীপের পথে আলোর মালায় সেজে বাদ্যযন্ত্র সহকারে ১৭৪টি বারোয়ারির প্রতিমা নিয়ে হয়ে গেল ‘আড়ং’। শোভাযাত্রা চলল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। যা নিয়ে পুলিশি নজরদারি কম থাকার অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। সকাল পর্যন্ত এই ভাবে শোভাযাত্রা চলায় সমস্যায় পড়েছেন বাইরে থেকে রাস দেখতে আসা দর্শনার্থীরা। কারণ, বড় বড় প্রতিমা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকায় যানবাহন আটকে গিয়েছে। অনেককেই বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরতে নবদ্বীপ ধাম বা বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশন পর্যন্ত ব্যাগপত্র নিয়ে হাঁটতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নবদ্বীপ ফাঁসিতলা গঙ্গায় ও পীরতলা খালে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। শুধু পুরসভা পরিচালিত এই দু’টি ঘাটই নয়, নবদ্বীপের বিভিন্ন জলাশয়েও অনেক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।প্রতিমাগুলি পোড়ামাতলা, ঢপওয়ালি মোড়, রাধাবাজার, দণ্ডপাণিতলা, চারিচারা বাজার, মঙ্গলচণ্ডীতলা, নবদ্বীপ কোর্টের সামনে হয়ে সরকারপাড়া অফিস ঘাট রোড, মালঞ্চপাড়া গাবতলা মোড় হয়ে বুড়ো শিবতলা রোড, হরিসভা পাড়া হয়ে পোড়ামাতলায় আসে।এছাড়াও বিভিন্ন অলিগলি থেকে প্রতিমাগুলি বের হয়ে সার্কুলার রোডে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক একটি প্রতিমা, এক একটি জায়গায় দু’ থেকে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। বেশ কিছু বারোয়ারির কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময় ধরে শোভাযাত্রা সার্কুলার রোডে দাঁড় করিয়ে রাখছিলেন। তাদের সরাতে পুলিশি তৎপরতা চোখে পড়েনি। অনেক পুলিশ কর্মীকেই প্রতিমার ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। রাধাবাজার পার্ক ডুমুরেশ্বরী পুজো কমিটির সম্পাদক সুমন্ত মালাকার,বলেন, প্রতিমার তুলনায় রাস্তা অনেক কম। সুষ্ঠুভাবে শোভাযাত্রা করতে গেলে দায়িত্ব নিতে হবে বারোয়ারি ও পুজো কমিটিগুলিকেও। যাঁরা প্রতিমা টানেন, তাঁরাও যে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, সে কথা মাথায় রাখতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শোভাযাত্রার এক একটি প্রতিমার সঙ্গে যেমন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ছিল, তেমনি ছিল জেনারেটর এবং পুজো কমিটির সদস্যরাও। সব মিলিয়ে প্রতিটি শোভাযাত্রা অনেকটা জায়গা নিয়ে নেয়।
দক্ষিণ অঞ্চলের পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, রাত সাড়ে বারোটার পর কিছু সময়ের জন্য পুলিশি তৎপরতা চোখে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীকালে ফের একই জায়গায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েছিল প্রতিমা। যদি শোভাযাত্রার রাস্তা বাড়ানো কিংবা উত্তর ও দক্ষিণে দু’ দিনে শোভাযাত্রার ব্যবস্থা করা হয়, তবেই এই সমস্যা মিটতে পারে।
এবছরই প্রশাসনিক স্তরে রুট বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। প্রশাসনিক আধিকারিকরা বেশ কয়েকবার সেই বর্ধিত রুট পরিদর্শনও করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন বারোয়ারি এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানায়। পুরনো রুটেই এ বছর শোভাযাত্রা বের হয়। কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটির কার্যকরী সভাপতি দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, লাইসেন্স ছাড়া অনেক বারোয়ারি শোভাযাত্রায় বেরিয়ে পড়েছিল। যেসব বারোয়ারি শুক্রবার দ্বিতীয় দিন বেরনোর কথা ছিল, তাদের অনেকে বৃহস্পতিবার শোভাযাত্রায় বেরিয়ে পড়েছিল।
নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, সবমিলিয়ে আড়ংয়ে দেরি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন নিশ্চয়ই ভাববে। উল্লেখ্য, পুরসভার পক্ষ থেকে ফাঁসিতলা ও পীরতলা দু’টি জায়গায় বিসর্জন চলছে। ক্রেন দিয়ে জল থেকে সেই প্রতিমার কাঠামো তুলে ফেলা হচ্ছে। আড়ংয়ের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার আরও ৬৭টি প্রতিমা বের হয়। আজ শনিবার ১৫টি প্রতিমাকে নিয়ে কার্নিভাল হবে। নিজস্ব চিত্র