উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে রাজ্যে আরও চারটি এসআইআর ‘কেন্দ্রিক’ মৃত্যু
বর্তমান | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও চুঁচুড়া এবং সংবাদদাতা, কাকদ্বীপ: ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) কেন্দ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে রাজ্যে। এই আবর্তেই শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে চারজনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্ক থেকেই মৃত্যুর ঘটনাগুলি ঘটেছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা। এঁদের মধ্যে দু’জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং দু’জন গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। শাসকদল তৃণমূল সহ-নাগরিকদের মৃত্যুর জন্য এসআইআর আতঙ্ককে দায়ী করেছে। যদিও বিজেপির অভিযোগ, স্বাভাবিক মৃত্যু, পারিবারিক অশান্তিতে হওয়া আত্মহত্যার ঘটনাতেও রাজনীতির রং লাগাচ্ছে। এরই পাশাপাশি ২০০২’এর ভোটার তালিকায় পরিবারের কারও নাম না থাকায় প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়েন খড়দহের বন্দিপুর গ্রাম পঞ্চায়তের ঈশ্বরীপুর গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলি নামে এক প্রৌঢ়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে নিরস্ত করেন তাঁকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, এসআইআর আবর্তে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে আত্মঘাতী হয়েছেন মোট ১৭ জন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও দু’জন।
ইনিউমারেশনের ফর্ম নিয়ে বাড়িতে পৌঁছেছিলেন বিএলও। বৃহস্পতিবার বিএলও’র কাছে থেকে ফর্ম নেওয়ার পরই হৃদরোমে আক্রান্ত হন জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির বারোঘরিয়া অঞ্চরে বর্মনপাড়ার বাসিন্দা লালুরাম বর্মন (৮০) নামে এক বৃদ্ধ। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। অনেক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এলেও, ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেননি ওই ব্যক্তি। বিতাড়িত হতে হবে, এই আশঙ্কাতেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পরিবারের দাবি। এরই পাশাপাশি জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া খড়িয়া পঞ্চায়েতের জগন্নাথ কলোনি এলাকায় শুক্রবার নরেন্দ্রনাথ রায় (৬০) নামে এক প্রৌঢ়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ২০০২’এর ভোটার তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও, নাম ছিল না নরেন্দ্রনাথবাবুর স্ত্রী’র। তাতেই ভীত-সন্ত্রস্ত এবং হতাশগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে পরিবারের দাবি।
এই পর্বে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির ঢোলাহাট থানার কালীচরণপুর গ্রামে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম সাহাবুদ্দিন পাইক (৪৫)। ২০০২’এর ভোটার তালিকায় সাহাবুদ্দিনের নাম থাকলেও, ছিল না তাঁর স্ত্রী আফরোজা বিবির নাম। স্ত্রীর পরিণতি নিয়ে চিন্তান্বিত এবং আতঙ্কিত ছিলেন। তাঁর বাবা মজিদ পাইকের দাবি, সারাক্ষণ সেই চিন্তার মধ্যেই রবিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন সাহাবুদ্দিন। কয়েকদিন চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে সেখানে যান মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার ও স্থানীয় বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার। অপরদিকে, শেওড়াফুলির গড়বাগানের নিষিদ্ধপল্লির বাসিন্দা বীথি দাস (৪৫) নামে এক মহিলা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। ২০০২’এর ভোটার তালিকাগ তাঁর নাম ছিল না। তবে পল্লির অন্য বাসিন্দাদের দাবি, স্বামীর সঙ্গে বিবাদের জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন বীথি।