নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর ও জলপাইগুড়ি: নিউটাউনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যাকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় নয়া মোড়! ঘটনার দিন অভিযুক্ত রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ‘চোর’ ধরতে অভিযুক্ত বিডিও গত ২০ অক্টোবর বিমানে চেপে নিজেই নাকি কলকাতায় এসেছিলেন! ২৮ অক্টোবর স্বপনবাবুকে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়েছিল। পরদিন, ২৯ অক্টোবর বিমানেই উত্তরবঙ্গে ফিরে যান প্রশান্তবাবু! বিমানের প্যাসেঞ্জার লিস্টে তাঁর নাকি নামও পাওয়া গিয়েছে! তবে একই নাম দুই যাত্রীর থাকতেই পারে। তাই তিনিই যে অভিযুক্ত বিডিও, তা প্রমাণ করার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করছে পুলিশ।
গত ২৮ অক্টোবর সল্টলেক দত্তাবাদ থেকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে। ২৯ অক্টোবর নিউটাউনের যাত্রাগাছি এলাকা থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ২৮ তারিখ ওই ফ্ল্যাটে বিডিও নিজেই স্বপনবাবুকে মারধর করেছিলেন বলে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এক ব্যক্তি। যিনি এই দাবি করেছেন, তিনিই বিডিওর সোনা চুরি করেছিলেন! তাই স্বীকারোক্তি দেওয়া ‘চোর’-কে জেরাও করেছে পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি কেউ। এদিকে, অপহরণ ও খুনের অভিযোগ দায়ের হলেও নিজের মেজাজেই রয়েছেন অভিযুক্ত বিডিও প্রশান্ত বর্মন। গত কয়েকদিন ধরে অফিসে তাঁর দেখা না মিললেও শুক্রবার জলপাইগুড়িতে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে যোগ দেন তিনি। বেরোনোর সময় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে সুর চড়িয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। আমাকে মাটিতে টেনে নামানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু এসব করে কোনও লাভ হবে না। আমি দাবাং বিডিওই থাকব।’ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশান্তবাবুর দাবি, ‘আমার কোনও বাড়ি নেই। আমার কোনও সোনা চুরি হয়নি। আমি ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে চিনি না। চোরকেও চিনি না। অভিযোগ যে কেউ তুলতে পারে। ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা হোক।’ বিধাননগর দক্ষিণ থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। পাশাপাশি, তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে বলে দাবি করে তিনি আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিডিও বলেন, ‘আমি এলএলবি করেছি। এখন পিএইচডি করছি। কিছুদিন পর নামের আগে ডক্টরেট বসবে। দশটি বইও লিখেছি।’ প্রশাসন সূত্রে খবর, একজন বিডিওর বিরুদ্ধে অপহরণ, খুনের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠায় নির্বাচন কমিশনও এ ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করেছে। ‘প্রভাবশালী’ তকমা নিয়ে বিডিওর সাফাই, ‘অনেকেরই তো বদলি রদ হয়। সেসব নিয়ে কোনও আলোচনা হয় না। অথচ যেকোনও বিষয়ে আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে। কারা এসব করছে, আমার ভালো করে জানা আছে।’