নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় বসা ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৬০৬ জন প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর শুক্রবার রাতে প্রকাশ করল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। ৬০ নম্বরের পরীক্ষায় কে কত পেয়েছেন, শুধুমাত্র সেই তথ্যই এদিন প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডলে সাড়ে ৯টা নাগাদ ফল প্রকাশের কথা জানালেও দীর্ঘক্ষণ ওয়েবসাইট অচল থাকায় ফল জানতে অনেক রাত হয়ে যায়। তবে, ফলপ্রকাশ হলেও নিয়োগ নিয়ে রয়ে যাচ্ছে আইনি জটিলতা। কর্মরত শিক্ষকদের কেন অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর দেওয়া হবে, আর দেওয়া হলেও তা ইন্টারভিউয়ের আগে না পরে দেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন তুলে জোড়া মামলা হয়েছে হাইকোর্টে। এদিন এই মামলাগুলির প্রাথমিক শুনানির পর ১২ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন স্থির করেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
এসএসসি এদিন জানিয়েছে, ইন্টারভিউয়ে কারা ডাক পাচ্ছেন, সেই তালিকা দ্রুতই প্রকাশ হবে। এই স্তরে ১২ হাজার ৫১৪টি শূন্যপদ রয়েছে। তাই ১:১.৬ অনুপাতে ২০ হাজারের কিছু বেশি প্রার্থীর ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়ার কথা। কমিশন জানিয়েছে, ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়া প্রার্থীদের ১৭ নভেম্বর থেকে তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। ইন্টারভিউয়ের বিস্তারিত সূচিও জানিয়ে দেওয়া হবে দ্রুত। তবে, এদিন হাইকোর্টেও এই ফলপ্রকাশের মামলা নিয়ে ছিল টানটান উত্তেজনা। মামলাকারী, রাজ্য সরকার এবং এসএসসির আইনজীবীদের শুনানি ও পালটা শুনানির পর বিচারপতি অমৃতা সিনহা ফলপ্রকাশে কোনও স্থগিতাদেশ দেননি। তবে, চূড়ান্ত রায়ের উপর নির্ভর করবে গোটা প্রক্রিয়ার অভিমুখ। অর্থাৎ, কর্মরতরা অভিজ্ঞতার নম্বর পাবেন কি না, পেলেও ইন্টারভিউয়ের আগে পাবেন, নাকি পরে পাবেন, সেটা তখন ঠিক হবে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৫ বছরের বেশি পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল হাইকোর্টে। যাঁদের অভিজ্ঞতা নেই, সেরকম একাধিক প্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, পরীক্ষা দেওয়ার আগেই তাঁরা ১০ নম্বর পিছিয়ে থাকছেন। বিচারপতি সব পক্ষকে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাকারীদের দাবি ছিল, এক বছরের অভিজ্ঞতার জন্য ২ নম্বর করে বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য ১০ নম্বর দেওয়া হবে। এটা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। তাঁদের আরও দাবি ছিল, প্রায় সব প্রার্থী বেসরকারি স্কুলে কর্মরত। তাঁরা কেন অভিজ্ঞতার নিরিখে অতিরিক্ত নম্বর পাবেন না?
শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘এই মামলা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রত্যেক মামলাকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরা পরীক্ষা দেওয়ার আগে থেকেই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। ফলে এই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা যায় না।’ রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলায় কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ না-দেওয়ার আবেদন জানান। তাঁর দাবি, এই মামলা শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন এবং আগামী ২৪ নভেম্বর শুনানি রয়েছে।