বকেয়া টাকা কবে? কেন্দ্রের জবাব চাইল হাইকোর্ট, ১০০ দিনের কাজ দ্রুত শুরুর নির্দেশ, আমাদের আপত্তি নেই, ব্যাকফুটে কেন্দ্র
বর্তমান | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কেন্দ্রের যাবতীয় চেষ্টা বানচাল! সুপ্রিম কোর্টের পর এবার কলকাতা হাইকোর্টও জানিয়ে দিল— দ্রুত ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে হবে পশ্চিমবঙ্গে। শুক্রবার মোদি সরকারকে এব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। এরপরই কেন্দ্রের তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী জানান, ১৮ জুনের নির্দেশ মেনে প্রস্তুতি চলছে। কেন্দ্রের কোনও অসুবিধা নেই। অর্থাৎ, সাড়ে তিন বছর পর রাজ্যে এই প্রকল্প আবার শুরু হওয়া এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। এবার প্রশ্ন হল, ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের বিপুল অঙ্কের বকেয়া টাকা কবে মিলবে? তা নিয়েও কেন্দ্রের হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থসারথী সেনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সেই হলফনামা পেশ করতে হবে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের মজুরি বন্ধ। মজুরি ও সরঞ্জাম বাবদ মত ৬ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা বকেয়া রেখেই ২০২২ সালের মার্চ মাসে রাজ্যকে অর্থবরাদ্দও থামিয়ে দেয় কেন্দ্র। সেই সঙ্গে মনরেগা আইনের ২৭ নম্বর ধারা কার্যকর করে, বার্ষিক শ্রম দিবস বরাদ্দ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিগত সাড়ে তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ প্রায় ৫০ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার কাজ হারিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সুর চড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু কেন্দ্র অজুহাত হিসেবে খাড়া করে টাকা নয়ছয়ের তত্ত্ব। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ এবং দার্জিলিং— এই চার জেলায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। হাইকোর্ট অবশ্য এই যুক্তি মানতে চায়নি। গত ১৮ জুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সাফ নির্দেশ দেয়, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে জনস্বার্থবাহী এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকতে পারে না। প্রয়োজনে এই চার জেলাকে বাদ দিয়েই আগামী ১ আগস্ট থেকে ১০০ দিনের কাজ পুনরায় চালু করতে হবে রাজ্যে। কিন্তু সেই নির্দেশ পালনের বদলে বাংলার মানুষকে ভাতে মারার চক্রান্ত চালিয়ে যেতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় মোদি সরকার। কিন্তু সেই আর্জি পত্রপাঠ খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। বহাল থাকে হাইকোর্টের নির্দেশ। মুখ পোড়ে মোদি সরকারের। এই নির্দেশের পরদিনই দ্রুত কাজ চালু এবং বকেয়া টাকার দাবিতে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্য। এদিন সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ দ্রুত শুরু নির্দেশ দিয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। চার সপ্তাহ পর পরবর্তী শুনানি।
প্রান্তিক মানুষের প্রাপ্য আদায়ের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছে মূল মামলাকারী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি। মামলাকারীদের আর্জি ছিল, এখনও পর্যন্ত যা মজুরি বকেয়া, সেই টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়া হোক। তা ছাড়া এত দিন টাকা বন্ধ করে রাখার জন্য ০.০৫ শতাংশ হারে সুদ দিক কেন্দ্র। সেব্যাপারে এদিনই প্রথম মোদি সরকারকে কোনও নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। ফলে আগামী দিনে বকেয়া আদায় নিয়েও নয়াদিল্লির সঙ্গে রাজ্যের আইনি এবং রাজনৈতিক লড়াই জারি থাকবে।
জেলায় জেলায় জবকার্ড ই-কেওয়াইসির কাজ চলছেই। জবকার্ড হোল্ডারদের তথ্য আপডেট করিয়ে রেখেছে পঞ্চায়েত দপ্তর। এদিন হাইকোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘আদালতের নির্দেশকে শ্রদ্ধা করি। এই নির্দেশের পরেও টাকা না দিলে, আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’