• SIR আতঙ্কে বেপাত্তা গৃহ-পরিচারিকারা, খোঁজ সমাধানের
    এই সময় | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: এসআইআর–এর (সার) আতঙ্ক এ বার প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে ঘর গেরস্থালিতেও।

    ফ্ল্যাটবাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করা কাজ কারও। কেউ গাঁ-গঞ্জ থেকে কলকাতায় এসে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে দিনান্তে ফিরে যান কিন্তু। বাংলায় ‘সার’ শুরু হওয়ার পর থেকে আচমকাই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন এমন পেশার বেশ কিছু লোকজন। বাকিদের চোখেমুখেও আতঙ্ক। জাত-ধর্মের ভেদাভেদ মুছে এই ভয় ছড়িয়েছে এই সব পেশায় জড়িতদের অনেকের মধ্যে।

    ‘বাংলাদেশি না ভারতীয়?’, যাঁদের বাড়িতে তাঁরা কাজ করেন, সেখানে এখন হামেশাই এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। ঘটনা হলো, বাংলাদেশ থেকে এসে দীর্ঘদিন এ পার বাংলায় বসবাস করছেন এবং নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এমন পরিচারক–পরিচারিকাদের অনেকেই ফিরে গিয়েছেন বলে দাবি অনেকের। তবে সরাসরি এ নিয়ে কিছু বলছেন না কেউ। তবে অনেকের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

    বিধাননগর পুরসভা এলাকায় ফ্ল্যাট বাড়িগুলিতে জঞ্জাল সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। পুরসভার জঞ্জাল সাফাইয়ের গাড়ি এলেও বহুতলের ফ্ল্যাটগুলি থেকে নেমে সাতসকালে গাড়িতে জঞ্জাল পৌঁছে দিতেন না অনেকেই। এই কারণে প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করার জন্য জমাদার নিয়োগ করা হয়। ছোট বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে একজন চার-পাঁচটি আবাসনের জঞ্জাল সাফাই করে পুরসভার ভাগাড় বা কমপ্যাক্টর যন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছে দেন। এটাই তাঁদের রুটিরুজি। একটি পরিবারের একাধিক ব্যক্তি এই পেশায় যুক্ত। আবাসনে এক বা একধিক ব্যক্তিকে মাস-মাইনেতে নিয়োগ করা হয়। অভিযোগ, এঁদের অধিকাংশই বাংলাদেশের। তবে তাঁদের আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড রয়েছে। তবে ২০০২–এর ভোটার তালিকায় তাঁদের সিংহভাগের নাম নেই।

    তেমনই একজন জানালেন, আপাতত এটাই তাঁদের রুটিরুজি। পরিবারের সব সদস্যই বাংলাদেশ থেকে এখানে চলে এসেছেন। ফলে দেশ ছাড়তে হলে মুশকিলে পড়বেন তাঁরা। কেষ্টপুরে কাজ করেন এমন একজনের কথায়, ‘আমরা চার ভাই পরিবার নিয়ে এখানে বাস করি। ২০০২-এর তালিকায় আমাদের নাম নেই। জানি না এর পরে কী হবে। কিন্তু আপাতত পেট চালানোর জন্য একটা ব্যবস্থার কথা ভেবেছি।’ কী সেই ব্যবস্থা? তাঁর কথায়, ‘আমরা দু’জন বাংলাদেশে ফিরে যাব। যে কোনও ভিসা জোগাড় করে ফের এ দেশে এসে কাজ করব। আমরা ফিরতে পারলে বাকিরাও সে দেশে গিয়ে ভিসা নিয়ে এ দেশে আসার চেষ্টা করবে। তার পরে যা কপালে আছে হবে।’

    সকালের ক্যানিং-শিয়ালদহ লোকালের ভিড়ে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এই লোকালে মূলত গৃহ–পরিচারিকারা কলকাতা এবং শহরতলিতে কাজে আসেন। সেই লোকালেই এখন নাকি মেলা ভাঙার আবহ। অনেকেই কাজে আসছেন না। তাঁদের অনেকে জানিয়েছেন, ২০০২–এর ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম নেই। একজন বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, ২০০২–এর ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। আমাদের কিন্তু সব নথি আছে।’ আর একজন বললেন, ‘শুনছি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে (সিএএ) আবেদন করতে হবে। কিন্তু রাস্তাঘাটে যা শুনছি, তাতে ভয় করছে।’

    মুশকিলে পড়েছেন তাঁদের পরিষেবা নেন যাঁরা, তাঁরাও। কেষ্টপুরের বাসিন্দা সুরজিৎ সাহা বলেন, ‘ওঁরা না এলে আমাদের বিপাকে পড়তে হবে। বাড়ির কাছাকাছি কোনও ভ্যাট নেই। আমাদের আবাসনে ৭৫টি ফ্ল্যাট। এতগুলো বাড়ি থেকে কী ভাবে জঞ্জাল সংগ্রহ করা হবে? এই কাজ যাঁরা করেন, শুনছি তাঁদের সকলেরই নাকি এই সমস্যা।’

  • Link to this news (এই সময়)