কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার হতাশা! আলিপুরদুয়ারে ৭ মাসের খুদেকে ‘খুন’ মায়ের
প্রতিদিন | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: সাতমাসের দুধের শিশুকে ‘খুন’ করল মা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ার জংশনের দক্ষিণ চেচাখাতা গ্রামে। গতকাল, শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকেই ওই সাতমাসের কন্যা সন্তান নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে। মা পূজা দে ঘোষের কথায় একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছিল। পরে রাতে নিজের সন্তানকে খুনের কথা স্বীকার করেন ওই তরুণী। রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে ওই কন্যা সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। কন্যা সন্তান জন্মের জন্যই কি খুন? সেই প্রশ্ন উঠেছে। দেহ উদ্ধারের পর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
দক্ষিণ চেচাখাতা গ্রামে স্ত্রী, বাবা ও সাতমাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে থাকেন পেশায় বীমা কর্মী জয়দীপ ঘোষ। গতকাল দুপুরে তিনি কাজে বাড়ির বাইরে ছিলেন। স্ত্রী পূজা দে ঘোষ ও বাবা মনোজ ঘোষ বাড়িতেই ছিলেন। শিশুর মা শ্বশুরকে পাশের ঘরে দুপুর খাবার দিয়ে স্থান করতে যান। স্থান থেকে ফিরে ঘরে ঢুকে বিছানায় নজর দিতেই দেখেন শিশু উধাও! বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করেও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। খবর যায় পুলিশে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন এসডিপিও শ্রীনিবাস এম পি ও অন্যান্য পুলিশ কর্তারা। পুলিশ কুকুর নিয়েও শুরু হয় তল্লাশি। মেয়ে নিখোঁজের খবর পেয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন জয়দীপ ঘোষও।
দিনভর তল্লাশি চালানোর পরও তেমন কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। মায়ের কথাতেও একাধিক অসঙ্গতি ছিল বলে পুলিশের মত। রাতের দিকে পূজাকে ধারাবাহিক জেরা করে পুলিশ। শেষপর্যন্ত জেরার মুখে ভেঙে পড়েন মা। স্বীকার করেন, মেয়েকে খুন করে পুকুরে দেহ ফেলা হয়েছে। সেই কথা শুনেই হতবাক হন তদন্তকারীরা। রাতেই বাড়ির পাশের একটি পুকুরে তল্লাশি চালানো হয়। কিছু সময় পরেই উদ্ধার হয় দেহ। এরপরেই পূজাকে গ্রেপ্তার করেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, দিনভর পুলিশকে বিভিন্ন রকম কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও করা হয়েছে। ঘটনার কথা জেনে ভেঙে পড়েছেন জয়দীপ ঘোষও।
কিন্তু কী কারণে খুন? তাঁর কি কোনও মানসিক সমস্যা রয়েছে? নাকি কন্যা সন্তানের মেনে নিতে পারেননি? স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কি কোনও বিবাদ চলছিল? সেসব বিষয়ও উঠে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। রাতেই ওই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সন্তান খুনের কথা জানার পরেই ক্ষোভ ছড়ায় প্রতিবেশীদের মধ্যে। অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেশীদের একাংশ মারমুখী হয়ে ওঠেন বলেও অভিযোগ। যদিও পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যেতে দেয়নি।