স্টাফ রিপোর্টার: স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে তৈরি হল অনিশ্চয়তা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফল বেরলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত ঝুলে রইল অভিজ্ঞতার নিরিখে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে দায়ের হওয়া মামলার ইস্যুতে। ওই মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ পর্ব শুরু করা যাবে না, এমনই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিচারপতি সিনহা জানান, পরীক্ষার ফল বেরলেও তার ভবিষ্যত নির্ভর করবে ওই মামলার ফলাফলের ওপর। আগামী ১২ নভেম্বর তার পরবর্তী শুনানি।
রাতে সমাজমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “এসএসসি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ সংক্রান্ত লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেশ ও অভিভাবকত্বে, রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষা আজ নতুন আশার দ্বার উন্মোচন করল। এই ফল প্রকাশ কেবলমাত্র একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়। বরং ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন নিয়োগের বাস্তবায়নের পথে এক অনন্য অগ্রযাত্রা।”
চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে ব্রাত্য লেখেন, “দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। রাজ্য সরকার সর্বোতভাবে আপনাদের পাশে আছে। প্রতিটি পদক্ষেপ হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও ন্যয়নিষ্ঠার সঙ্গে। এবং আস্থা রাখুন এই প্রত্যয়ে যে, আপনার অপেক্ষা, যোগ্যতা ও নিষ্ঠার মূল্য রাজ্য সর্বদা সম্মান করবে।” এদিন সন্ধায় ফল বেরিয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্রর মডেলও এসএসসি’র ওয়েবসাইট https://westbengalssc.com-এ তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও রাতেই সার্ভার ক্র্যাশ করায় পরীক্ষার্থীরা ফল দেখতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। এদিন শুধু অবশ্য লিখিত পরীক্ষায় কে কত পেয়েছেন সেটাই জানা গিয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় কত নম্বর পেলে উত্তীর্ণ বলে ধরা হবে, তা জানায়নি এসএসসি। সূত্রের খবর, আগামী ১৭ই নভেম্বর থেকে উত্তীর্ণদের নথি যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলও কয়েকদিনের মধ্যেই বেরবে বলে এসএসসি জানিয়েছে। কিন্তু ফল বেরলেও নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে রইল বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে।
গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬র এসএসসি-র প্যানেল বাতিল হওয়ায় চাকরি হারান ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা। পুরানো প্যানেল বাতিল করে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সেইমতো ফের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে এসএসসি। একাদশ-দ্বাদশে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৬০৬ জন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ৩৫টি বিষয়ের উপর রাজ্যের ৪৭৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয় এসএসসি। নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ এই দু’টি স্তর মিলিয়ে শূন্যপদ ৩৫ হাজার ৭২৬টি। তার মধ্যে একাদশ ও দ্বাদশের শূন্যপদ ১২ হাজার ৫১৪টি। কিন্তু জটিলতা তৈরি হয় অন্য ইস্যুতে। কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৫ বছরের বেশি পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকলে অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে।
আবেদনকারীদের বক্তব্য, যাদের প্যানেল বাতিল হল, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কী করে অতিরিক্ত ১০ নম্বর পাবে? বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এক বছরের অভিজ্ঞতার জন্য ২ নম্বর করে বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসএসসি। সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর দেওয়া হবে। এতে নতুন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। আবেদনকারীদের দাবি, এটা সম্পূর্ণ আইন-বিরোধী। পাল্টা এসএসসি-র দাবি, “এই মামলা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রত্যেক মামলাকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরা পরীক্ষা দেওয়ার আগে থেকেই আইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এখন তাঁরা গত ৩০ মে পরীক্ষা বিষয়ক যে বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করতে পারেন না।” রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেন, এখন যেন কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ না-দেওয়া হয়। তার কারণ এই মামলা শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন এবং আগামী ২৪ নভেম্বর মামলার শুনানি রয়েছে। সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত জানায়, ১২ নভেম্বর ফের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।