• 'SIR-আতঙ্কে মৃতদের' বাড়ি যাবে তৃণমূল, বিশেষ দল গঠন করলেন অভিষেক! শোকার্ত পরিবারগুলিকে দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণও...আজই...
    ২৪ ঘন্টা | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • প্রবীর চক্রবর্তী: বাংলায় চলছে SIR (SIR in Bengal)। এই আবহে SIR-আতঙ্কে মৃতদের (SIR deaths in Bengal) বাড়িতে বাড়িতে যাবে তৃণমূল (TMC)। বিশেষ দল গঠন করলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। জানা গিয়েছে ৩ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে তৃণমূল সব পরিবারকে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় SIR-আবহে একটি টিম গঠন করছেন। সেই টিমের অন্তর্ভুক্ত নেতৃত্ববর্গ স্যর-উদ্বেগে মৃত বলে দাবি-করা মৃতের পরিবারগুলিতে যাবেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। এবং তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।

    আজ থেকেই বাড়ি-বাড়ি 

    জানা গিয়েছে, আজ, শনিবার থেকেই এই টিমের নেতৃত্ববর্গ সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিতে যাবেন। প্রথম দিনে সেই সব পরিবারে যাওয়া হবে যাঁরা স্যর আতঙ্কে মারা গিয়েছেন বা আত্মহত্যা করেছেন। প্রদীপ করের পরিবারে যাবেন সমীরুল ইসলাম ও পার্থ ভৌমিক। বিকেল ৫টা নাগাদ। টিটাগড়ে যাবেন ড. শশী পাঁজা ও সুদীপ রাহা। বিকেল ৪টে নাগাদ। ডানকুনিতে যাবেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও সুদীপ রাহা। আজ বিকেলেই। হুগলিতে যাবেন জয়া দত্ত, সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় নেতৃত্ব। উলুবেড়িয়ায় যাবেন অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গেও থাকবেন স্থানীয় নেতৃত্ববর্গ।

    বাংলায় SIR

    বাংলায় SIR শুরু হতেই , এসআইআর আতঙ্কে শুরু হয়েছে 'মৃত্যুমিছিল'। আগরপাড়া, কোচবিহার, ডানকুনি, দীঘা, উলুবেড়িয়া, কান্দি, বহরমপুর, ইলামবাজারের পরে সেই তালিকায় যোগ হয়েছে বীরভূমের সাঁইথিয়া,  দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি ও জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির নামও । 

    সাঁইথিয়ায় মৃত্যু প্রৌঢ়ের

    বীরভূমের ইলামবাজারের পর সাঁইথিয়ায় এসআইআর আতঙ্কে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সাঁইথিয়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৪ নম্বর পার্টের বাসিন্দা বিমান প্রামাণিক (৫২) নামের ওই ব্যক্তি গত তিনদিন ধরে চরম মানসিক উদ্বেগে ভুগছিলেন। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর ও তাঁর দিদি মল্লিকা পালের পদবি ভুল করে “প্রামানিক”-এর বদলে “পাল” লেখা হয়েছে। এই নিয়েই আতঙ্কিত ছিলেন বিমানবাবু। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর ও এলাকার বিএলও’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আশ্বাস পেলেও উদ্বেগ কাটেনি তাঁর। বুধবার সন্ধ্যায় আচমকা বুকে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত তাঁকে সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

    মৃত্যু কুলপিতে 

    এসআইআর-আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কুলপির শাহাবুদ্দিন পাইকের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি বিধানসভার ঢোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীচরণপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন শাহাবুদ্দিন পাইক। শনিবার ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত কাজে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন BLO। তিনি শাহাবুদ্দিন পাইককে জানান, তাঁর স্ত্রীর নাম ভোটার তালিকায় নেই। এই কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শাহাবুদ্দিন। এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে স্ট্রোক হয় তাঁর। শাহাবুদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় শোকের ছায়া এলাকায়। এ নিয়ে তৃণমূল তোপ দেগেছে বিজেপিকে। নিশানা করেছে কেন্দ্রকে।

    বৃদ্ধের মৃত্যু ধূপগুড়িতে 

    বাড়িতে বিএলও, সেই অবস্থাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ৮০ বছরের এক বৃদ্ধের। ঘটনাটি ঘটেছে ধূপগুড়ির বারোঘরিয়া অঞ্চলের বর্মনপাড়ার ১৭০ নম্বর বুথে। মৃতের নাম লালুরাম বর্মন (৮০)। ভোটার তালিকায় নাম ছিল না ওই ব্যক্তির। এসআইআর আতঙ্কেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে বিজেপি SIR-আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য ঈশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, কাকতালীয়ভাবে বিএলও যখন ওই বাড়িতে ছিলেন, তখনই মৃত্যু হয় কালুরাম বর্মন নামে ওই ব্যক্তির। ওই ব্যক্তি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। এর সঙ্গে এসআইআরের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু মৃতের পরিবারের দাবি, লালুরাম অসুস্থ থাকলেও এসআইআর নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তৃণমূলও দাবি করেছে, এসআইআর আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে এই বৃদ্ধের। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি দীপু রায়ের দাবি, ওই ব্যক্তি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন। ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। আমাদের ধারণা এই কারণেই আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

    মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে

    ভোটার লিস্টে বাবার নাম ভুল। এসআইআর আতঙ্কে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা যুবকের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনা সামনে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য। খবর পেয়ে হাসপাতালে মন্ত্রী-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাজিরপুর বুথের ঘটনা। মহেন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা রাজেশ আলী এদিন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। পরিবারের লোক আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় তারপর অবস্থা অবনতি দেখে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজেশ। পরিবারের লোকের অভিযোগ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় রাজেশের বাবার নাম ছিল আদিল। কিন্তু বর্তমান তালিকায় তার বাবার নাম ভুল এসেছে। যার কারণে আতঙ্কে ভুগছিল সে। সেই আতঙ্ক থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা। নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগেছে পরিবার। ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম, হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন। সমগ্র ঘটনা নিয়ে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করার তৃণমূল। চক্রান্তের অভিযোগ করে তৃণমূল।

    জলপাইগুড়িতে

    এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যার জলপাইগুড়িতে। শুক্রবার জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া খড়িয়া পঞ্চায়েতের জগন্নাথ কলোনি এলাকায় নরেন্দ্রনাথ রায় নামে বছর ষাটের এক বৃদ্ধের ঝুলন্ত দেহ বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, এসআইআরের নথি সংক্রান্ত আতঙ্কেই আত্মহত্যা করেছেন তিনি। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও স্ত্রীর নাম নেই। এনিয়ে তাঁর আতঙ্ক দানা বাঁধে। তার পরই এই ঘটনা। আত্মঘাতী ওই বৃদ্ধের নাম নরেন্দ্র নাথ রায় (৬০)। পেশায় ভ্যানচালক। পরিবারের অভিযোগ, ২০০২ এর তালিকায় তার নাম থাকলেও ছিল না তার স্ত্রী বিনোদিনী রায়ের নাম। আর এতেই তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গত কয়েকদিন ধরে সারাক্ষণ এবার কী হবে, কী হবে- এনিয়েই চর্চা করতেন। তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে মেয়েকেও বারবার বলতেন।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)