বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে ১৮৫০ কোটি বিনিয়োগের প্রস্তাব, তৈরি হবে ৪৩ হাজার কর্মসংস্থান
প্রতিদিন | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
দেব গোস্বামী, বোলপুর: প্রতিভা বিকাশের উদ্দেশ্যে রাজ্য ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দপ্তরের উদ্যোগে সিনার্জি-২০২৫ বাণিজ্য সম্মেলনে তৈরি হল ৪৩ হাজারের কর্মসংস্থানের সুযোগ। বিভিন্ন শিল্প সংস্থা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তরফে ১৮৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব। যার মধ্যে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে প্রস্তাবিত বিনিযোগের পরিমাণ ৩৭১ কোটি ও ১,৪৭৯ কোটি। শুক্রবার বোলপুরে বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দপ্তরের উদ্যোগে সিনার্জি বাণিজ্য সম্মেলনে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় ৮০০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য গ্রামোন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, অতিরিক্ত সচিব রাজেশ পাণ্ডে, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, বোলপুরে সাংসদ অসিত মাল, বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং-সহ অন্যরা। জানা গিয়েছে, আহমেদপুরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া চিনি মিলটিকে বাণিজ্য উদ্যান’-এর রূপ দেওয়া পাশাপাশি শান্তিনিকেতনে সোনাঝুরি হাটকে বোলপুরের শিবপুর সংলগ্ন বিশ্ব ক্ষুদ্রবাজারে স্থানান্তরিত চিন্তাভাবনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।
এছাড়াও এপ্রিল জুন তিন মাসেই দুই জেলায় ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩,০৪৫ কোটি টাকা। ভবিষ্যতেও ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ৩,৫৮৮টি আবেদন অনুমোদনের ভিত্তিতে ৯৬.৯৮ কোটি টাকা সরাসরি পৌঁছে যাবে ছোট শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে। ছাড়পত্র পেতে যাতে কোনও সমস্যা না তৈরি হয় দমকল, পরিবেশ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর, বিদ্যুৎ সহ ২৮টি সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয রাজ্যের তরফে। এদিন বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ দুই জেলার ১২ শিল্প উদ্যোগীদের বিধিবদ্ধ ছাড়পত্র বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই তুলে দেওয়া হয়।
রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প তথা কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য সংকল্প নিয়েছেন। সেই মতো একের পর এক কর্মযজ্ঞের মধ্যে ফলাফল মিলছে। সহায়তা পাচ্ছেন ছোট শিল্প কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। ইতিমধ্যেই বীরভূমের আহমেদপুরের সুগার মিল নতুন করে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্ক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইলামবাজার, লাভপুরেও ক্ষুদ্র বাজার গড়ার কাজ চলছে। সবক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে কারিগররা, শিল্পীরা উপকৃত হবেন। বেশ কয়েকটি হাট খোলা হবে। শিল্পীদেরই সেই হাটে বসে বিক্রি করতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাটের পসার বাড়ছে। তবে হাট নিয়ে মামলা চলছে। এটি শেষ হলেই বিকল্প ভাবনা আছে আমাদের। আপাতত বোলপুরের শিবপুরে বিশ্ব ক্ষুদ্রবাজার ক্যাম্পাসে সোনাঝুরি হাটের আদলেই হস্তশিল্পীদের হাট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, বীরভূমে টিকিরবেতায় ৯৩.৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পিতল ও কাঁসার সামগ্রী ক্লাস্টার সেন্টার তৈরি হয়েছে। ফলে পিতল ও কাঁসার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৭০০ শিল্পী উপকৃত হচ্ছেন। ইলামবাজারে চৌপাহাড়ি গ্রামে ৫ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পোশাক তৈরির হাব নির্মাণ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ উৎকর্ষ বাংলার অধীনে এক হাজার শিল্পী উপকৃত হচ্ছেন।
বোলপুর, মুরারই, রামপুরার দুই ব্লকে তিনটি হস্তচালিত তাঁত ক্লাস্টার সম্পূর্ণ হয়েছে। উপকৃত হবেন ১৫০০ তাঁত শিল্পীরা। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদেও খাগড়া পিতল ও বেল মেটাল ক্লাস্টার জন্য ২ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উৎপাদন ও পণ্যের মান বৃদ্ধির জন্য বিশেষ সেন্টারে নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠুরিয়ায় মৃৎশিল্প প্লাস্টার তৈরি করে ৫৫০জন শিল্পী উপকৃত হচ্ছেন। বহরমপুরে ও আসবাব প্লাস্টারের জন্য কমন ফেসিলিটি সেন্টার নির্মাণ করে উপকৃত হচ্ছেন কারুশিল্পীরা। হরিপাড়ায় তাম্রলিপ্ত মিল কর্তৃক সুতা গুদাম বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও উদ্যোক্তা ও হস্তশিল্পীদের নাম সরকারি পোর্টালে নথিভুক্ত করা হয়েছে। বীরভূমে ৯ হাজার ৮৬৬ জন ও মুর্শিদাবাদে ৭হাজার ৭৯৯ জন রয়েছেন।
রাজ্যে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজেশ পাণ্ডে বলেন, ছোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ব্যাঙ্ক ঋণের নানা স্কিম সংক্রান্ত সুবিধা পাবেন। দুই জেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ আবেদন নিষ্পত্তি ও অনুমোদন করা হয়েছে। উপকৃত হবেন হস্তশিল্পী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ছাড়াও শিল্প উদ্যোগ ও বিনিয়োগকারীরা।”