• আর ‘সস্তা-পুষ্টিকর’ নয়, মূল্যবৃদ্ধির বাজারে মিড ডে মিলের পাতে ডিম বড্ড ‘দামি’
    প্রতিদিন | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বাঙালির সস্তায় পুষ্টিকর খাবারের অন্যতম হল ডিম-ভাত। সেটাও এখন মহার্ঘ হয়ে উঠছে। সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে পাতে আর গোটা নয়, আধখানা ডিমেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। স্কুলের মিড-ডে মিলে সামান্য ডিমটুকুও জোটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেই কবে খুচরো ডিমের দাম ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকায় উঠেছিল। আর নামছেই না। যেন বাঁধা দাম হয়ে গিয়েছে। গত বছর মে-জুন মাসেও ডিমের দাম ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা ছিল। গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর সেটা সাড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা হয়েছিল। তারপর থেকে ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকাই যেন ‘ফিক্সড প্রাইস’ হয়ে গিয়েছে ডিমের।

    ডিম উৎপাদনে রাজ্য কার্যত স্বয়ংসম্পূর্ণ। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ গত বছরই তা ঘোষণা করেছিলেন। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে বাৎসরিক ডিমের চাহিদা প্রায় ১৬০০ কোটি। আগে বিপুল পরিমাণ ডিম ভিনরাজ্য থেকে আমদানি করা হতো। রাজ্যে ডিমের উৎপাদন বাড়াতে সচেষ্ট হয় প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর। ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার পোল্ট্রির ডিম উৎপাদনের জন্য ইনসেন্টিভ স্কিম চালু করে। ৬৪টি বেসরকারি পোল্ট্রিতে ডিম উৎপাদন হচ্ছে। আরও ১৪০টির আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়া রাজ্য সরকারের নিজস্ব ফার্মেও ডিম উৎপাদন হচ্ছে। গ্রামে বাড়িতে মুক্তাঙ্গনে পালনের জন্য বিনামূল্যে হাঁস-মুরগির বাচ্চা বিলি করা হয়। ধীরে ধীরে রাজ্যে ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেয়েছে। এখন আর ভিনরাজ্যের ডিম আমদানি করতে হয় না। রাজ্যের ডিমের চাহিদা মেটাচ্ছে রাজ্যেই উৎপাদিত ডিম।

    তবে ডিমের দামে রাশ না টানার কারণ হিসেবে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। বর্তমানে গ্রামেগঞ্জেও প্রচুর ফাস্টফুডের দোকান হয়ে গিয়েছে। ফলে সেখানে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। ফলে গত বছর দাম যে চড়া দাম উঠেছিল, তা থেকে এবার দাম বিশেষ কমেনি বললেই চলে। উৎপাদন হলেও চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় দাম কমছে না। একইসঙ্গে ডিম উৎপাদনের আনুষঙ্গিক খরচও বেড়েছে। এটাও ঠিক। তবে এর মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব কিছু দেখছেন না ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের কর্তারা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতির দাবি, ডিমের দাম এখন ১০ টাকা হওয়া উচিত। এখনও পর্যন্ত সবথেকে সস্তার খাদ্য হচ্ছে ডিম। সব জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু ডিমের দাম এখনও অনেকটাই কম আছে। তিনি জানান, প্রতিবছরই এই সময়টাই ডিমের দাম বাড়ে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম আছে।

    পোলট্রি ফেডারেশনের কর্তারা জানান, পোল্ট্রি মুরগির প্রধান খাদ্য ভুট্টা। সারা দেশে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়। চাহিদা ৩৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। কিন্তু এখন উৎপাদিত ভুট্টার একটা বড় অংশ দেশের ইথানল প্ল্যান্টে চলে যাচ্ছে। ফলে পোলট্রি শিল্পে সংকট দেখা দিচ্ছে। মুরগির খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণেই সারা দেশজুড়ে ডিমের দাম কিছুটা বাড়ছে।
    ডিমের দাম না কমায় বাঙালির পাতে আকাল দেখা দিচ্ছে ডিমের পদের। চরম সমস্যা দেখা দিতে চলেছে খুদে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে। মিড-ডে মিলে ডিম দেওয়া আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, একটি গোটা ডিমের দামও পুরো মিড-ডে মিলে বরাদ্দ নেই। শিশুদের পাতে আগামিদিনে ডিম পড়বে কি না সেটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন।

    বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানে প্রতি পিস ডিমের দাম ছিল ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা। জেলায় মিড-ডে মিলের জন্য প্রতিদিন ডিমের চাহিদা থাকে প্রায় ৬ লক্ষ। কিন্তু খরচে পোষাতে ডিমের বরাদ্দ কমাতে হয়েছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। ট্রে হিসেবে ডিম কিনলে পশ্চিম বর্ধমানে ডিমের দাম এখন প্রতি পিস ৭ টাকা। এই মুহূর্তে এই জেলায় ডিমের দাম বাড়েনি। আবার কমেওনি। একই রকম আছে। খুচরোয় প্রতি পিস ডিমের দাম ৮ টাকা। জেলায় আইসিডিএসে শিশু ও প্রসূতি মিলিয়ে সপ্তাহে ১৫ লক্ষ ডিমের প্রয়োজন পড়ে। এই জেলায় প্রাথমিক স্কুলে একদিনে ডিম প্রয়োজন হয় এক লক্ষ ৩৫ হাজার। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য একদিনে ডিম প্রয়োজন হয় এক লক্ষ ২০ হাজার। সূত্রের খবর, ডিম নেওয়া হয় ট্রে হিসেবে। আইসিডিএসের কর্মীরা বলেন, “ডিমের দাম এখানে একই রয়েছে। তাই শিশুরা ডিম পাচ্ছে নিয়মিত।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)