• নিজস্ব প্রার্থনা সঙ্গীত কি বাদই দিতে হবে, বিড়ম্বনায় বহু স্কুল
    আনন্দবাজার | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • শুধুই জাতীয় সঙ্গীত নয়। এখন কলকাতার বহু স্কুলে প্রার্থনার সময়ে জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি নিজস্ব প্রার্থনা সঙ্গীতও গাওয়া হয়। এ বার জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গাওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় সেই সব স্কুল মনে করছে, তাদের এত দিনের প্রার্থনা সঙ্গীত বাদ দিতে হবে। আর এখানেই প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশ্ন, এত বছর ধরে জড়িয়ে থাকা স্কুলের নিজস্ব প্রার্থনা সঙ্গীত বাদ দিতে হবে কেন?

    শিয়ালদহের টাকি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী জানালেন, তাঁদের স্কুলে প্রথমে শপথবাক্য পাঠ, তার পরে স্কুলের প্রার্থনা সঙ্গীত হয়। সপ্তাহের ছ’দিন ছ’টি প্রার্থনা সঙ্গীত হয় স্কুলে। শেষে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ছাত্রীরা ক্লাসে যায়। শম্পা বলেন, ‘‘এ বার রাজ্য সঙ্গীত গাওয়া প্রতিদিন বাধ্যতামূলক হলে স্কুলের নিজস্ব প্রার্থনা সঙ্গীত বোধহয় বাদই দিতে হবে। প্রার্থনায় তিনটি গান কি পর পর গাওয়া সম্ভব?’’ তাঁর মতে, প্রতিদিনের বদলে সপ্তাহে এক দিন রাজ্য সঙ্গীত গাওয়ার অনুমতি দিলে ভাল হয়।

    সরকারি স্কুলে প্রার্থনা শুরু হয় সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে। প্রার্থনার সময় দশ মিনিট। ১০টা ৫০ থেকে শুরু হয় ক্লাস। অনেকেই মনে করছেন, যে সব স্কুলের নিজস্ব প্রার্থনা সঙ্গীত আছে, সেখানে দশ মিনিটে তিনটি গান হয়ে শপথবাক্য পাঠ কোনও ভাবেই সম্ভব হবে না। মিত্র ইনস্টিটিউশন, ভবানীপুরের প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলছেন, ‘‘এর আগে শিক্ষা দফতরের তরফে স্কুলগুলিকে বলা হয়েছিল, তাদের নিজস্ব পোশাক বাদ দিয়ে পড়ুয়াদের নীল-সাদা পোশাক পরতে হবে। অনেক স্কুল তাতে রাজি হয়নি। আমাদের রাজ্য সঙ্গীতকেও কি সে ভাবে জোর করে গাওয়ানো হচ্ছে না?’’

    ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের প্রশ্ন, স্কুলগুলি আগে কোন গান গাইবে, রাজ্য সঙ্গীত না জাতীয় সঙ্গীত? তিনি বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে নবান্ন থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, যে কোনও অনুষ্ঠানে প্রথমে রাজ্য সঙ্গীত গাইতে হবে। অনুষ্ঠানের শেষে হবে জাতীয় সঙ্গীত। অন্য দিকে, জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা আছে, ওই গান গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। স্কুল তা হলে কোন দিকে যাবে?’’ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য জানান, তাঁদের স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে ছ’দিনে ছ’টি গান গায় পড়ুয়ারা। পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অমান্যও করা যাবে না। তা হলে এত দিনের ঐতিহ্য, স্কুলের প্রার্থনা সঙ্গীতই বন্ধ করে দিতে হয়।’’

    বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুস্মিতা বসাক বলেন, ‘‘জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে রাজ্য সঙ্গীত যোগ হলেও আমরা স্কুলের নিজস্ব প্রার্থনা সঙ্গীতও রেখে দিতে চাই। প্রয়োজনে প্রার্থনা সঙ্গীত কিছুটা ছোট করে গাওয়া যেতে পারে।’’ বাঘা যতীন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের স্কুলে প্রার্থনায় জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি বেদের বাণী পাঠ হয়। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল রাজ্য সঙ্গীত। তিনটিই দশ মিনিটের মধ্যে তাঁদের শেষ করতে হচ্ছে।

    কমলা গার্লসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মিঠু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে প্রার্থনায় প্রথমে স্তোত্রপাঠ হয়, তার পরে নিজস্ব প্রার্থনা সঙ্গীত। কিছু ক্ষণ ধ্যানও হয়। এ বার কী করা হবে, সে ব্যাপারে অন্য শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)