• এই প্রথম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে নেই ফেডারেশন! কারণ কী? মুখ খুললেন পরমব্রত, জয় চন্দ্র
    আনন্দবাজার | ০৮ নভেম্বর ২০২৫
  • স্বরূপ বিশ্বাস এবং ফেডারেশন সদস্যেরা ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই। কেন নেই? উৎসবের দ্বিতীয় দিন এই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। ফেডারেশন সভাপতি ফোন ধরছেন না। আনন্দবাজার ডট কম-কে সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি সাফ বলেছেন, “মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে দয়া করে এ সবে জড়াবেন না। ওঁকে সব সময় আমরা পাশে পেয়েছি। ওঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”

    তা হলে কেন এই প্রশ্ন উঠেছে? ঘটনাক্রম বলছে, উদ্বোধনের দিন থেকে স্বরূপের অনুপস্থিতি এর প্রধান কারণ। ৬ নভেম্বর, ধনধান্য সভাগৃহে সাংসদ দেব থেকে প্রাক্তন সাংসদ মিমি চক্রবর্তী পর্যন্ত উপস্থিত। হাজির সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, কোয়েল মল্লিক-সহ প্রায় গোটা টলিউড। কেবল দেখা যায়নি সংগঠনের সভাপতি এবং তাঁর সদস্যদের। দ্বিতীয় দিনে এই ধোঁয়াশা আরও পরিষ্কার। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও উৎসব প্রাঙ্গণে স্টল দিয়েছে ফেডারেশন। কিন্তু সেখানে সংগঠনের সদস্যেরা কই? এক জন পুলিশ কনস্টেবল এবং একটি টেবিল ছাড়া আর কিচ্ছু নেই সেখানে। এই ঘটনাও এই প্রথম।

    উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ খ্যাতনামীদের নিয়ে নানা প্রদর্শনী। সেই দায়িত্ব প্রতি বছরের মতো এ বছরেও পরিচালক-অভিনেতা সুদেষ্ণা রায়ের উপরে। সুদেষ্ণা ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ‘সিনে আড্ডা’-সহ বিভিন্ন আলোচনায় ইতিমধ্যেই নাকি যোগ দিতে দেখা গিয়েছে ফেডারেশনের চোখে ‘অভিযুক্ত’ ১৩ পরিচালকের বাকি কয়েক জনকেও। যা দেখে অনেকের মত, এ ভাবেই আগামী দিনে ফেডারেশনের ‘কু নজরে’ থাকা পরিচালকেরা নাকি হারানো জায়গা ফিরে পেতে চলেছেন। এঁদের চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ নাকি সেই পদক্ষেপের প্রথম ধাপ!

    ফেডারেশনের বিরুদ্ধে যে ১৩ জন পরিচালক একজোট হয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন, চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁদের উপস্থিতিই কি স্বরূপের অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ?

    উত্তর খুঁজতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, স্বরূপ এবং সুদেষ্ণার সঙ্গে। তিন জনেই ফোনে অধরা। পরমব্রত এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “সুদেষ্ণাদি কী সামলাচ্ছেন যেমন জানি না, তেমনি স্বরূপদার অনুপস্থিতির খবরও আমার জানা নেই।” পাশাপাশি, কাজের প্রসঙ্গে এর আগে তিনি আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছিলেন, “কিছু মনোমালিন্য, কিছু ভুল বোঝাবুঝি ফেডারেশনের সঙ্গে হয়েছিল। আমি আশাবাদী, সেই মনোমালিন্য এবং ভুল বোঝাবুঝি মেটানো সম্ভব হবে। সেটা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই হবে। অন্য কোনও পন্থায় নয়। সেই রাস্তায় ইতিবাচক কিছু পদক্ষেপ আশা করি আগামী দিনে নেওয়া সম্ভব হবে।” এ দিনেও সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে পরমব্রত জানান, তাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছা, আগামী দিনে যা হবে সবটাই আলোচনার মাধ্যমে হবে। আইনি পথে আর কিছু হবে না।

    যদিও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক পরিচালকের দাবি, যত ক্ষণ না ‘অভিযুক্ত পরিচালক’ দের সকলে আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারছেন তত ক্ষণ তাঁর বিশ্বাস নেই। “উৎসবে যোগদান মানেই সব স্বাভাবিক, এখনই মানতে পারছি না।”

    অভিনেতা বা পরিচালকদের সঙ্গে স্বরূপের বিরোধের কথা কারও অজানা নয়। এর আগে দেব, মিমি, রাজ-সহ বহু অভিনেতা-পরিচালকের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে তাঁর। পরে তা মিটেও গিয়েছে। কিন্তু এ বার এমন কী হল যে, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত তিনি?

    ফেডারেশন সভাপতি অধরা হলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন কার্যকারী সভাপতি জয় চন্দ্র চন্দ্র। তাঁর দাবি, “উৎসবের কিছু ঘটনা আমাদের মনে ক্ষোভ তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে চুপ আছি। মন থেকে চাইছি, উৎসব ভাল ভাবে মিটুক। তার পর এই বিষয় নিয়ে না হয় আলোচনা হবে।” তিনি এও জানিয়েছেন, এই প্রথম উৎসবের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নেই ফেডারেশন। সংগঠনের প্রত্যেকে তার জন্য খুবই কষ্ট পাচ্ছেন।

    বিরোধী পরিচালকেরা উৎসবের সঙ্গে যুক্ত, এটাই কি অনুপস্থিতির মূল কারণ? এই প্রশ্নেরও এখনই জবাব দিতে রাজি নন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি। তাঁর কথায়, “একটু অপেক্ষা করুন। উৎসব মিটুক। আমাদের যদি কোনও বক্তব্য থাকে তার পর আমরা জানাব।” কারণ, কোনও ভাবেই চলচ্চিত্র উৎসবের ছন্দ নষ্ট করতে রাজি নয় ফেডারেশন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)