মিথিলায় হবে সীতা মন্দির! বিহারের জমিতে হিন্দুত্বের হলকর্ষণ বিজেপির
বর্তমান | ০৯ নভেম্বর ২০২৫
শুভঙ্কর বসু, সীতামারি: ‘যব সীতা হ্যায় তব হি রাম! জাগাহ যব খালি থা, তো ইতনে দিন কিউ নেহি বানায়া মন্দির?’ বিহারের মিথিলাঞ্চলের সীতামারি। এখানকার পুনৌরা গ্রামে হলকর্ষণের সময় সীতাকে পেয়েছিলেন রাজা জনক। যুগ যুগ ধরে রামায়নের এই পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত। সীতার সেই আবির্ভাবস্থল পুনৌরা ধাম। এখানে রয়েছে প্রাচীন সীতা মন্দির। পাশেই জানকী কুন্ড। এই মহাপুণ্যস্থান গোটা মিথিলাঞ্চলের কাছে একটা আবেগ। ঘরের মেয়ে সীতার আবেগ।
এখানে তৈরি হবে জানকী মন্দির। ভোটের ঠিক তিন মাস আগেই শিলান্যাস করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। কেন্দ্রের ‘রামায়ণ সার্কিট’ ও ‘স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে’র আওতায় যে ১৫টি ধর্মীয়স্থান রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সীতামারি। কিন্তু ঠিক ভোটের আগেই কেন?
পুনৌরা ধাম যাওয়ার ভাঙাচোরা রাস্তায় কোনওমতে টোটো এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন সতীশ কুমারের। ‘মন্দির বানানে সে ভুখ থোড়ি না মিটেগা। লোগোকো কো চাহিয়ে কাম।’ গুজরাটের সুরাটের প্লাইউড কারখানায় কাজ করতেন সতীশ। মায়ের শরীর খারাপ। তাই বাড়ি ফিরে ধারদেনা করে একটা টোটো কিনেছেন। ‘আব তো রোজগার মিলতা হোগা?’ ‘কাহা সাহাব? হর এক আদমি হাওয়াই(টোটো) লেকে ঘুম রাহা হ্যায়।’ দিনে রোজগার মেরেকেটে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। সংসারের খরচ সব সামলে হাতে আর কত থাকে? মন্দির হলে তো মানুষ আসবে। আয় হবে। সেজন্যই তো সরকারের এই উদ্যোগ? ‘কেয়া সাহাব। আপকো কুছ পাতা নেহি। মন্দির বানাকে কাম হি দেনা থা, তো পেহেলে নেহি বানা সকতে? ইয়ে সিরিফ ধরম অউর রাজনীতি কা খেল হ্যায়।’
সীতামারি স্টেশন থেকে চার কিলোমিটার পেরিয়ে জানকী ধামগামী রোড। সেখানে উঠেই সতীশ বলেন, ‘যব অমিত শাহ আয়ে থে তো একদিন আর একরাত মে বান গয়া থা ইয়ে রোড। আব হাল দেখিয়ে।’ শুধু রাস্তা নয়। ভালো হাসপাতাল নেই, স্কুল নেই, কলেজ নেই, রোজগার নেই। কারখানা যা ছিল সব বন্ধ। মোদি-নীতীশের জমানায় এতটুকু বদলায়নি সিতামারির ভাগ্য। একসুর সতীশ, রাজেশ, মুকেশ, ইরফানদের।
গত শতকের নয়ের দশকের গোড়া থেকে মর্যাদা পুরুষোত্তম ‘রাম’ বা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান বিজেপির আইডেন্টিটি পলিটিক্সের অঙ্গ। কিন্তু সীতামারিতে মানুষের মুখে মুখে ফেরে ‘জয় সিয়ারাম’। এখানে রাম শুধুই ‘পাহুন’(জামাই)। যিনি কিনা বনবাসে নিয়ে গিয়ে ঘরের মেয়েকে শুধুই কষ্ট দিয়েছিলেন। রাম-সীতার বিয়ের মাস নভেম্বরে মেয়ের বিয়ে দিতে চান না সীতামারির কোনও বাবা-মা। বিশ্বাস, তাহলে মেয়ের ভাগ্যও সীতার মতোই কষ্টের হবে। এখানে রামনবমী নয়,পালিত হয় সীতানবমী। মিথিলাঞ্চলের মানুষ অযোধ্যায় এখনও জল পান পর্যন্ত করেন না। কারণ অযোধ্যা ঘরের মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। জানালেন পুনৌরা ধামের মহন্ত কৌশল কিশোর।
উত্তরপ্রদেশের তুলনায় বিহারের রাজনীতির খোলনলচেই আলাদা। এখানে রাজনীতির গতিমুখ মূলত সমাজতান্ত্রিক। হিন্দুত্ব কখনওই বিহারের রাজনীতিতে মুখ্য হয়ে ওঠেনি। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরও বিহারে ভাল ফল করতে পারেনি বিজেপি। একার ক্ষমতায় বিহারে কখনও ক্ষমতাও দখল করতে পারেনি তারা। বিরোধীদের অভিযোগ, সীতার প্রতি গেরুয়া শিবিরের আচরণ বরাবরই অবহেলাপূর্ণ। নেপথ্যে বিজেপির পুরুষতান্ত্রিক, নারীবিদ্বেষী মানসিকতা। আসলে সীতার নামে হিন্দুত্বের তাস খেলাই মোদি- শাহদের মূল লক্ষ্য। বিজেপি প্রার্থী সুনীল কুমার পিন্টুর অবশ্য দাবি, ‘সীতা মাইকে আর্শীবাদ সে হি বিহার মে ফির একবার বনেগি এনডিএ সরকার।’