কন্যাসন্তানকে খুন করে অপহরণের নাটক! গ্রেফতার মা, হাড়হিম কাণ্ড আলিপুরদুয়ারে
বর্তমান | ০৯ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: চব্বিশ ঘণ্টাও টিকল না চুরির তত্ত্ব। পুলিশের জেরায় ভেঙে পড়ে ছ’মাসের শিশুকন্যাকে খুন করে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করল তার মা।
শুক্রবার দুপুরে আলিপুরদুয়ারের রেল জংশনের দক্ষিণ চেঁচাখাতায় ছ’মাসের শিশু নিখোঁজের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। তদন্তে নেমে গভীর রাতেই বাড়ির পাশে একটি পুকুর থেকে শিশুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে তার মা পূজা দে নানাভাবে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। মুলত, চুরির তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করেছিল সে। শেষে স্বীকার করে, সন্তানকে গলা টিপে খুন করে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গৃহবধূর মা এবং প্রথম স্বামী আত্মঘাতী হয়েছিলেন। প্রথম স্বামীকে হারানোর দেড় বছর পর ওই গৃহবধূ ফের বিয়ে করে। তার সন্তানধারণেও অনীহা ছিল। কারণ, সে সর্বক্ষণ নিজের নিরাপত্তার অভাব বোধ করত। বধূর বর্তমান স্বামী বিমা এজেন্ট। শুক্রবার দুপুরে শিশু নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে ছিলেন তাঁর বাবা, স্ত্রী ও শিশুটি। শিশু নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরেও ওই গৃহবধূর আচরণ স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গিয়েছে। পরে খবর পেয়ে তার স্বামী বাড়ি ফিরে আসেন। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত তন্নতন্ন করেও শিশুটির খোঁজ মেলেনি। রাতে খোদ পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী ঘটনাস্থলে যান। তারপরেই শিশুটির দেহ মেলে বাড়ির ঠিক পাশে পুকুরে।
শনিবার ধৃতকে পুলিশ আলিপুরদুয়ার জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিনের জেল হেপাজতে পাঠিয়েছেন। পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত চলছে।
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, পূজা কি পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস রোগে আক্রান্ত ছিল? আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ নীলাদ্রি নাথ বলেন, অতীতের কোনও মানসিক সমস্যা থাকলে সন্তান জন্মের ৪২ দিন পর্যন্ত প্রসূতি মায়েদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে তাকে সবসময় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। এমনকী স্তন পান করানোর সময়ও শিশুকে মায়ের কাছে একা রাখা যায় না।
নীলাদ্রিবাবু জানান, এই রোগে আক্রান্ত অনেক সময় ভাবে তার সন্তানের উপর কুশক্তির প্রভাব আছে। সন্তানের মাধ্যমে পরিবারের অন্য কারও ক্ষতি হতে পারে। এই ধরনের ‘ইলিউশন’ বা ভ্রম থেকেও পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস আক্রান্ত রোগীরা এমন ঘটনা ঘটাতে পারে।