নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর, সংবাদদাতা, রাজগঞ্জ ও বাগডোগরা: সল্টলেক থেকে সোনা ব্যবসায়ীকে অপহরণ এবং নিউটাউনে নিয়ে গিয়ে খুন। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন এখনও অধরা। তবে, অপহরণ ও খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে বিডিওর ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ। একজন বিডিও’র গাড়িচালক। অন্যজন বন্ধু। শুক্রবার নিজেকে ‘দাবাং বিডিও’ বলে দাবি করেছিলেন প্রশান্তবাবু। তবে, দুই সঙ্গী পুলিশের হাতে পাকড়াও হতেই চুপসে গিয়েছেন। কার্যত বেপাত্তা তিনি। শনিবার বিডিও অফিস খোলা থাকলেও দেখা যায়নি তাঁকে! দু’জনের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে ফোন করা হলেও ‘দাবাংবাবু’র কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি! মেসেজেরও উত্তর দেননি তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম রাজু ঢালি এবং তুফান থাপা। রাজুকে রাজারহাট এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউটাউনে তিনি বিডিও’র গাড়ি চালাতেন। তুফান থাপার বাড়ি জলপাইগুড়িতে। তিনি বিডিও’র ঘনিষ্ঠ এবং বন্ধু। পুলিশ জানতে পেরেছে, তুফান নাকি আবার ঠিকাদারও। জলপাইগুড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। শনিবার ধৃতদের সল্টলেকে বিধাননগর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের স্বার্থে দু’জনকে ১৪ দিনের পুলিশি হেপাজতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত ১২ দিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। শুধু খুন নয়, দেহ লোপাটের সঙ্গেও রাজু-তুফানের যোগ রয়েছে বলেও সন্দেহ তদন্তকারীদের।
গত ২৮ অক্টোবর সল্টলেক দত্তাবাদ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল সোনা ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যাকে। বিডিও প্রশান্ত বর্মন নীলবাতি লাগানো গাড়িতে তাঁকে অপহরণ করেন বলেই অভিযোগ। নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে স্বপনবাবুর উপর নির্যাতন করা হয়। তারপর খুন এবং দেহ লোপাট। পরদিন নিউটাউনের যাত্রাগাছি থেকে স্বপনবাবুর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩১ অক্টোবর এই ঘটনায় রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ওই মামলায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হল।
এসআইআরের কাজের জন্য এদিন খোলা ছিল রাজগঞ্জ বিডিও অফিস। যদিও সেখানে দেখা যায়নি প্রশান্ত বর্মনকে। অফিস চত্বরে নীলবাতি লাগানো দু’টি সরকারি গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। অভিযোগে ওঠার পর রাজগঞ্জ ছেড়ে শিলিগুড়ি পালিয়ে এসেছিলেন ‘দাবাং বিডিও’। কিন্তু এদিন শিলিগুড়ির মাটিগাড়া শিবমন্দিরের ইউনিভার্সিটি অ্যাভিনিউ পাড়ায় বিডিওর ঠিকানা এবং এসপি মুখার্জি রোডে অবস্থিত বিলাসবহুল বাড়িতেও বাইরে থেকে তালা ঝুলতে দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিজেপি কিষান মোর্চার জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি নকুল দাসের অভিযোগ, ‘অপহরণ ও খুনের মতো ঘটনায় অভিযুক্ত! অথচ, এখনও গ্রেফতারই হলেন না বিডিও। তাহলে কি মূল দোষীকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে?’