• অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলেও ভোগান্তি শুরুতেই
    আনন্দবাজার | ০৯ নভেম্বর ২০২৫
  • চলতি ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এর মূল লক্ষ্য, কর্মসূত্রে দূরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের কাজটা সহজ করে দেওয়া। অথচ বহু মানুষ ইতিমধ্যেই এই সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা, আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের নামের বানানে মিল না থাকলে এ কাজ করাই মুশকিল। তাই প্রশ্ন উঠছে, যাঁদের জন্য এই ব্যবস্থা, তাঁরা আদৌ এর সুবিধা পাবেন তো? না কি বাড়বে ভোগান্তি! কমিশন সূত্রের বক্তব্য, বেশির ভাগ সমস্যা শীঘ্রই মিটবে। কিন্তু নামের বানান মিলের বিষয়টি নিয়ে তাদেরও কিছু করার নেই প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা হওয়ার কারণে। প্রসঙ্গত, যে আধার কার্ড নিয়ে অতীতে এত আপত্তি ছিল কমিশনের, তা-ই এখন অনলাইন ব্যবস্থার প্রায় প্রতিটি মূল ধাপে কার্যকর রয়েছে।

    কমিশনের পোর্টালে লগ-ইন করলেই সফটওয়্যার জানতে চাইছে ভোটারের ফোন নম্বর ভোটার কার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে কি না। বাস্তবে বেশিরভাগ মানুষের মোবাইল নম্বর ভোটার কার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত নেই। সে ক্ষেত্রে ওই পোর্টাল ‘ফর্ম-৮’ পূরণ করতে বলছে। ভোটারদের প্রশ্ন, এনুমারেশনের আগে নতুন ফর্মটি ভরলে সময়মতো নিষ্পত্তি হবে তো? কমিশন সূত্রের ব্যাখ্যা, অনলাইন ‘ফর্ম-৮’-এ থাকা শুধুমাত্র ‘মোবাইল কারেকশন’ অপশনটি বেছে নিলেই মোবাইল নম্বর সংযুক্ত হবে সঙ্গে সঙ্গে। তখন ‘লগ-আউট’ করে ফের ‘লগ-ইন’ করলেই বাকি কাজ হবে।

    আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের নামের বানান মিলিয়েও দেখতে বলছে সফটওয়্যার। উভয় কার্ডের বানানে মিল না থাকলে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে বুথ লেভল অফিসারের (বিএলও) সঙ্গে। অথচ, অনেক মানুষের এই দুই কার্ডে নামের বানানে বিস্তর অমিল রয়েছে। কারণ, কার্ড তৈরির সময়ে নামের ইংরেজি বানানের বাংলা রূপটি যান্ত্রিক ভাবে বদলে যায় হামেশাই। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, অনলাইন পদ্ধতিতে কিছু ছাঁকনি রাখতে হয় ন্যায্য ভোটার বাছাইয়ের স্বার্থে। তাই আধারের সঙ্গে (যে হেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রাহ্য করেছে কমিশন) মিল রাখার বিষয়টি সফটওয়্যারে সংযুক্ত রয়েছে। নির্ধারিত সেই ব্যবস্থার বাইরে সফটওয়্যার কাজ করবে না। তা এড়ানোও সম্ভব নয়। নামের বানানের অমিলের কারণে অনলাইনে অসুবিধা হলে বিএলও-র মাধ্যমে এনুমারেশন ফর্ম ভর্তি করা যাবে। ফলে বাইরে কর্মরত ব্যক্তি বা পরিযায়ী শ্রমিকদের এতে অসুবিধা বাড়বে বলেই অনেকের মত। প্রশ্ন উঠছে, তাঁদের সুবিধা কি আদৌ দেওয়া গেল! কমিশনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “ভোটারের হয়ে তাঁর নিকটাত্মীয়ও ফর্ম ভরতে পারেন।” কিন্তু যিনি একা অথবা যাঁর নিকটাত্মীয় অসুস্থ বা বৃদ্ধ, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা মেটানোর কী পথ রয়েছে? নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রতিটি জায়গায় স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁরা সেই সাহায্য করবেন।

    গত এসআইআর-এর তথ্য ওই সফটওয়্যারে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট ‘ড্রপ-ডাউন’ থেকে রাজ্য, বিধানসভা, পার্ট বা সিরিয়াল নম্বর ইত্যাদি পূরণ করলেও সফটওয়্যার জানাচ্ছে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না (ডেটা নট ফাউন্ড)। আবার আগের এই তথ্যগুলি কারও মনে না থাকলে সফটওয়্যারে তা খুঁজে দেখারও সুযোগ নেই। একই সঙ্গে ভোটারের দেওয়া ফোন নম্বরে এককালীন পাসওয়ার্ড (ওটিপি) আসতে বিস্তর দেরি হওয়ায় লগ-ইনের সময় যাচ্ছে পেরিয়ে।

    যদিও নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, এই সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে। সফটওয়্যারে যুক্ত গত এসআইআর-এর তথ্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। যান্ত্রিক এই খামতি দূর করার কাজ চলছে বলে দাবি করা হয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)