‘নাবিক’-পরিষেবা প্যারাসুটেও, ঝাঁপের রেকর্ড ডিআরডিও-র
আনন্দবাজার | ০৯ নভেম্বর ২০২৫
মাটি থেকে প্রায় ৩২ হাজার ফুট উঁচুতে সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস বিমান থেকে একে-একে ঝাঁপ দিলেন তিন জন! তারপর বাধাহীন ভাবে নেমে এলেন আরও প্রায় দু’হাজার ফুট! তখনই এক ঝটকায় খুলে গেল তাঁদের প্যারাসুট। তারপর সেই প্যারাসুটের সাহায্যে নিশ্চিন্তে নেমে এলেন পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে। সেনা ছাউনিতে এমন প্যারাট্রুপিং অনুশীলন স্বাভাবিক। কিন্তু এই ঝাঁপ স্বাভাবিক ছিল না। সেনা জানিয়েছে, বিশ্বে এই প্রথম মাটি থেকে ৩০ হাজার ফুটের বেশিউচ্চতায় কোনও প্যারাসুট খোলা হল! তাই এই রেকর্ডের সাক্ষী রইল এ রাজ্যের সেনা ঘাঁটিও।
না, কোনও রেকর্ড গড়ার জন্য ওই তিন জন ৩২ হাজার ফুট থেকে ঝাঁপ দেননি। এই ঝাঁপের উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রতিরক্ষা উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থার (ডিআরডিও) নতুন সামরিক প্যারাসুটের ক্ষমতা যাচাই করা। তা সফল হয়েছে। সেনা সূত্রের খবর, প্যারাসুট দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় অবতরণের ক্ষেত্রে সেই জায়গার জিপিএস অবস্থান জানা জরুরি। প্যারাট্রুপারের হাতে ঘড়ির মতো একটি যন্ত্রে উচ্চতা, অবস্থান-সহ সেই সব তথ্য থাকে। দেশীয় সংস্থার তৈরি এই ‘মিলিটারি কমব্যাট প্যারাসুট সিস্টেম’ (এমসিপিএস) দিয়ে অবতরণের ক্ষেত্রে নয়া প্যারাসুটে ভারতের নিজস্ব দিগনির্দেশক স্যাটেলাইট ব্যবস্থা (নেভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনস্টেলেশন বা নাবিক) কার্যকর। তার ফলে কোনও সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে অন্য কোনও দেশের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। উল্লেখ্য, কার্গিল যুদ্ধের সময় আমেরিকা জিপিএস তথ্য দিয়ে ভারতকে সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ উঠেছিল।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধে এবং বিশেষ সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে প্যারাট্রুপার বাহিনীর কার্যকারিতা সামরিক মহলে সুবিদিত। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ২ প্যারা রেজিমেন্টের সেনারা আকাশপথে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে নেমেছিলেন। সেনাকর্তারা বলেন, সেই আকস্মিক অবতরণ এবং হামলার পাঁচ দিনের মধ্যে পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করে। এ ছাড়াও, একাধিক বিশেষ অপারেশনে প্যারাট্রুপারদের নিযুক্ত করা হয়েছে। সেনা সূত্রের মতে, এই নয়া প্যারাসুটের মাধ্যমে উঁচু পার্বত্য এলাকাতেও নিশ্চিন্তে অবতরণ সম্ভব। ভারত বর্তমানে যে ভাবে পার্বত্য যুদ্ধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করছেতাতে এই প্যারাসুটের কার্যকারিতা তাৎপর্যপূর্ণ।
মাটি থেকে এত উঁচুতে ঝাঁপ দিয়ে প্যারাসুট খোলার কৃতিত্বকেও স্বীকৃতি দিচ্ছেন সেনাকর্তারা। ডিআরডিও-র ‘এরিয়াল ডেলিভারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট’-এর তিন জন ‘টেস্ট জাম্পার’ এই কাজ করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘এর আগে আমেরিকাও এত উচ্চতা থেকেপ্যারাসুট দিয়ে অবতরণ করতে পারেনি। তা ছাড়া, ওরা সর্বোচ্চ যে উচ্চতায় প্যারাসুট খোলার মহড়া করেছে সেখানে রবারের তৈরি পুতুল ব্যবহৃত হয়েছিল। কোনও প্যারাট্রুপার ছিলেন না।’’
সূত্রের খবর, এই প্যারাসুট অবতরণের সময় তাড়াহুড়ো করে না এবং একে নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থা আছে। মাটি থেকে ৩২ হাজার ফুট উপর থেকে ঝাঁপ দিলে প্যারাট্রুপারের শরীর অতিরিক্ত ঠান্ডায় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য একটি বিশেষ পোশাক থাকছে। বিশেষ হেলমেট, অক্সিজেনের বোতল ও মাস্ক এবং নাইট ভিশন যন্ত্রও থাকছে। তার ফলে রাতের অন্ধকারেও এই প্যারাসুট ব্যবহার করে নামতে সুবিধা হবে।