• ধাক্কা আদালতে, ওষুধে বকেয়া ফেরতের নির্দেশ
    আনন্দবাজার | ০৯ নভেম্বর ২০২৫
  • রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে ওষুধ সরবরাহকারী বহু সংস্থার কোটি-কোটি টাকা বছরের পর বছর বকেয়া রাখছিল নবান্ন। ‘রাজরোষে’ পড়ার ভয়ে চিঠির পর চিঠি লিখে তাগাদা দেওয়া ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপও করতে পারছিল না সংস্থাগুলি। তবে শেষমেশ টাকা আদায়ে আইনি পথ বেছে নিয়েছিল কলকাতার এন্টালির এক ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থা। টাকা আদায় করতে গত জানুয়ারি মাসে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিল তারা। সংস্থার দাবি ছিল, ২০১৭ থেকে স্বাস্থ্য দফতরে তাদের বকেয়া থাকা ১ কোটি ৫২ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৪২ টাকা ৪১ পয়সা দিতে হবে। সম্প্রতি সেই মামলায় রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য।

    সম্প্রতি হাই কোর্টের নির্দেশ, ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই বেসরকারি সংস্থাকে পাইপয়সার হিসাব মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যকে। ১০ ডিসেম্বর কোর্ট দু’পক্ষকে ডেকে পরিস্থিতি জানতে চাইবে। টাকা মেটানো না-হলে স্বাস্থ্য দফতরকে শাস্তির হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কোর্ট। প্রসঙ্গত, রায়ের দিনই সরকারি কৌঁসুলি কোর্টে জানান, সরকার বকেয়া টাকার মধ্যে ৬৬ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যে ‘রিলিজ়’ করে দিয়েছে। বাকি ৯০ লক্ষ টাকাও দ্রুত দেওয়া হবে।

    তবে এন্টালির এই সংস্থা কার্যত হিমশৈলের চূড়া মাত্র। সূত্রের খবর, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় বিভিন্ন সংস্থার মোট বকেয়ার পরিমাণ ৫৪ কোটি টাকা। এর বেশিরভাগই স্ট্রোকের ওষুধ, ক্যানসারের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবিটিসের ওষুধ, থ্যালাসিমিয়া-হিমোফিলিয়ার ওষুধ, আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট ইত্যাদি সরবরাহ করে। হাওড়ার একটি সংস্থার ২০২২ সাল থেকে ২ কোটি ৯ লক্ষ টাকা বকেয়া। দমদমের একটি সংস্থার বকেয়া প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। পাইকপাড়ার একটি সংস্থার বকেয়া ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। সূত্রের খবর, টাকা আদায়ে এ বার এই সংস্থাগুলিও কোর্টে যেতে পারে।

    উত্তর কলকাতার এক ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার কর্তার কথায়, ‘‘বেড়ালের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবে, তা নিয়ে এত দিন সকলে ইতস্তত করছিল। এক জন সেই ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছে। এ বার একজোট হয়ে আমাদের এগোতে হবে।’’ মধ্য কলকাতার এক ওষুধ সংস্থার কর্তা বলেন, ‘‘পুজোর জন্য ক্লাবগুলিকে সরকার টাকা দিচ্ছে। অথচ, ওষুধের টাকার কথা বললেই কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলে বলছে, ‘ওরা টাকা দিচ্ছে না।’ কেন্দ্র-রাজ্য ঝামেলার জন্য আমরা কেন ভুগব?’’

    কোর্টে মামলাকারী সংস্থার কর্ণধার চন্দ্রশেখর মণ্ডলের কথায়, ‘‘৩০ বছর ধরে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরে ওষুধ দিচ্ছি। গত ৫-৬ বছরের মতো খারাপ অবস্থা আগে কোনওদিন দেখিনি। বকেয়ার জেরে ওষুধ দিতে পারব না বললেই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা সংস্থাকে ব্ল্যাক লিস্টেড করার হুমকি দিচ্ছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। আমরা মুম্বই, গুজরাত, বেঙ্গালুরু থেকে ওষুধ আনি। ধার করে কত ওষুধ আনব! এখন যা অবস্থা, তাতে হয়তো সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য আমাদের হেনস্থা হতে হবে।’’

    ওষুধ সংস্থাগুলির বকেয়া টাকা এবং মামলার হুঁশিয়ারি নিয়ে এমডি (এনআরএইচএম) শুভাঞ্জন দাস ও রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা জবাব দেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)