দাদার শারীরিক টানাপোড়েনের জেরে হৃদরোগে মৃত্যু ভাইয়ের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
এসআইআর কার্যকরের আশঙ্কা ঘিরে মতুয়া মহাসঙ্ঘের অনশন মঞ্চে নেমে এল শোকের ছায়া। অনশনকারী দাদা নিতাই মণ্ডলের স্বাস্থ্য যখন ক্রমেই অবনতি হচ্ছিল, সেই উদ্বেগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল তাঁর ভাই প্রফুল্ল মণ্ডলের। নদিয়ার বাসিন্দা প্রফুল্লর মৃত্যুসংবাদে শোকস্তব্ধ পরিবার এবং আন্দোলন শিবির দুই জায়গাতেই নেমে এসেছে বিষণ্ণতা।
জানা গিয়েছে, রবিবার অনশনরত নিতাই মণ্ডলকে বুকে ব্যথা ও ডিহাইড্রেশনের কারণে ভর্তি করতে হয় বনগাঁ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শরীর মারাত্মকভাবে জলশূন্য হয়ে পড়েছিল। চলছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ। এরই মধ্যে ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদে প্রতিবাদী মতুয়া পরিবারের মনোবল ভেঙে দিয়েছে।
তৃণমূল-সমর্থিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের অনশনের পঞ্চম দিনের দৃশ্য এটি। অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত অন্তত ৯ জন অনশনকারীর শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। প্রত্যেকের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের উত্তাপ আরও বেড়েছে।
সঙ্ঘাধিপতি, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসআইআর-এর আতঙ্কে মানুষ মরছে, মতুয়ারা অনশন করছে— অথচ নির্বাচন কমিশন যেন উদাসীন। শান্তনু ঠাকুর ও কেন্দ্রীয় সরকার মতুয়া সমাজকে ধ্বংস করতে চাইছে। কমিশন সেই পরিকল্পনাই কাজে লাগাচ্ছে।’ তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে।
এসআইআর নিয়ে মতুয়া সমাজে ভয় যে তীব্র, তা বোঝা যাচ্ছে আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্তেই। মমতাবালা ঠাকুর আগেই দাবি করেছিলেন, এসআইআর কার্যকর হলে রাজ্যের প্রায় দুই কোটি মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে, যার ‘৯৫ শতাংশই মতুয়া’। সেই আশঙ্কা থেকেই বহু মানুষ সিএএ ফর্ম পূরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে তাঁর অভিযোগ।
বিজেপির ‘ষড়যন্ত্র’ রুখতেই গত ৫ নভেম্বর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছে মতুয়া মহাসঙ্ঘ। কাজের জন্য বাইরে থাকার কারণে অনশনের প্রথম দিন ভার্চুয়ালি আন্দোলন শুরুর ঘোষণা করেন মমতাবালা। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার তিনি সরাসরি অনশন মঞ্চে যোগ দেবেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন মতুয়া রাজনীতির এমন নাটকীয় পরিস্থিতি দেখা যায়নি। দাদার আন্দোলন আর ভাইয়ের মৃত্যুর মর্মস্পর্শী ঘটনা আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে ঠাকুরনগরের রাজনৈতিক বাতাবরণ। আন্দোলন যে শিগগিরই থামছে না, সেই ইঙ্গিতই আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।