দুর্গাপুরে ২১২ নম্বর বুথের ২৯১ জন ভোটারের নাম কমিশনের পোর্টাল থেকে উধাও
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
বাংলায় শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সেই নামের তালিকা লাগবে বর্তমানে চলমান এসআইআর প্রক্রিয়ায়। কমিশনের পোর্টালে সেই তালিকা সবাই উদগ্রীব হয়ে দেখছেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও কমিশনের পোর্টাল থেকে নাম উধাও। দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার ৪১ জন ভোটার পড়েছেন বিপাকে। শুধু এই ৪১ জন নয়, ওই বিধানসভার ২৯১ জনের নাম নেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়।
দুর্গাপুরের ভারতী এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২১২ নম্বর বুথের ঘটনা। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় এলাকার ৪১ জন ভোটারের নাম থাকলেও নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে তাঁদের নাম নেই। অথচ তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই রয়েছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার হার্ড কপি। সেখানে স্পষ্টভাবে তাঁদের নামের উল্লেখ রয়েছে। আবার এই বিধানসভার ২৯১ জনের নাম নেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়। আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগেছেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। ঘোর চক্রান্ত করে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে একাধিক মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বর্তমানে চিকিৎসাধীন। এসআইআর নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলে পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তার প্রতিবাদে মহানগরের রাজপথে মিছিল করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষের পাশে থাকার বার্তা দেন তাঁরা।
দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক এবং জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান ভারতী এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ পেয়েই রবিবার সকালে ওই এলাকায় পৌঁছোন রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। এছাড়া ছিলেন তৃণমূলের দুর্গাপুর ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি রাজীব ঘোষ-সহ এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। নেত্রীর নির্দেশে পাশে থাকার বার্তা দেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পোর্টালে নাম না থাকা এক বাসিন্দা এ নিয়ে নিজের ক্ষোভ উপরে দিয়েছেন। সঞ্জয় সেন নামে স্থানীয় ওই বাসিন্দা জানান, ‘১৯৯৬ সাল থেকে আমি এখানে রয়েছি। এখানেই ভোট দিতাম। এখন নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে দেখছি আমার নাম নেই। আমাদের কাছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার হার্ড কপি রয়েছে। সেখানে নাম রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার বলেছেন কোন যোগ্য ভোটারদের যেন নাম বাদ না যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে আমাদের নামই বাদ পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ঠিক নেই।‘
মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘২০০২ সালে নির্বাচন কমিশন নাম তোলার সময় কারচুপি করেছে। অনেক ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে।‘ নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মিলে চক্রান্ত করছে নির্বাচন কমিশন। সেজন্যই হাজার হাজার নাম বাদ যাচ্ছে। মানুষজন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমরাও এলাকায় এলাকায় প্রতিবাদ করছি। নির্বাচন কমিশনের কাছেও জবাব চাইতে যাব।‘
বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুই তৃণমূলকে পাল্টা নিশানা করেছেন। তৃণমূলকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস এসআইআর নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। একজনও ভারতীয় নাগরিকের নাম বাদ যাবে না।‘ দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন,’ বিষয়টি কমিশনকে জানাব। তবে অযথা আতঙ্কের কারণ নেই। যেহেতু ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম আছে, তাই এনুমারেশন ফর্ম তাঁরা পাবেন। পরে শুনানি করে নতুন তালিকায় তাঁদের নাম তোলা করা হবে।‘