৭৭ বছরেও হয়নি সেতু, নির্বাচন বয়কটের ডাক বিহারের ৩ গ্রামে
বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
পাটনা: বিহারে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দফার প্রচারও শেষ। রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিতে শাসক বা বিরোধী-কোনও দলই পিছু হটতে নারাজ। অথচ গয়া থেকে প্রায় ১৫০ কিমি দূরের তিনটি গ্রামের কাছে উন্নয়ন যেন স্বপ্ন হয়েই রয়ে গিয়েছে। পাথরা, হেরহাঞ্জ ও কেওয়ালডিহ-এই তিনটি গ্রামের ৮ হাজারের বেশি বাসিন্দাদের একটাই দাবি, স্থানীয় মহোরহর নদীর উপর একটি সেতু তৈরি করে দিক সরকার। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও সাঁতার কেটেই নদী পেরোতে হয় তিন গ্রামের বাসিন্দাদের। সেতু না থাকায় চিকিত্সার অভাবে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পালটা ফুঁসে উঠেছেন গ্রামবাসীরা। স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সেতু না হওয়া পর্যন্ত আমরা ভোট দেব না। পুল নেহি তো ভোট নেহি।’
তিন গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে মহোরহর নদী। অন্য পাশে জঙ্গল। প্রতি বছর বর্ষায় নদীর জলস্তর বেড়ে কখনও কাঁধ পর্যন্ত উঠে যায়। ফলে প্রায় চার মাস নদী পেরিয়ে ওপারে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তিন গ্রামের বাসিন্দাদের। সেই সময় পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়া বা বাজারে কৃষকদের ফসল বিক্রি- সব কিছুই বন্ধ হয়ে যায়। কার্যত গৃহবন্দি দশা হয় গ্রামবাসীদের। এমনকি কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও নদী পেরিয়ে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আর খুব প্রয়োজন হলে বুক জলে সাঁতার কেটেই পার হতে হয় নদী। এক মহিলা বললেন, ‘৭৭ বছর ধরে আমরা সবাই ভুগছি। নেতারা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যান। আমাদের কাছে উন্নয়ন মানে সেতু তৈরি।’ অপর এক বাসিন্দা বললেন, ‘আমাদের কতটা সমস্যা হয়, তা আমরা ছাড়া কেউ বোঝে না।’ তিনি জানান, নির্বাচনের প্রচারে সকলেই নারী ক্ষমতায়নের কথা বলছে। অথচ তিনটি গ্রামের মহিলারা সাধারণ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত।’ পাথরা গ্রামে বসবাস করতেন সুনীল বিশ্বকর্মা। তাঁর মা জানালেন, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নদীর তীরে আনা হয়েছিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িও ভাড়া করেছিলেন পরিজন। কিন্তু সেই গাড়ি নদীর জল পেরিয়ে আর আসতে পারেনি। নদীর পাশেই বিনা চিকিত্সায় মৃত্যু হয় সুনীলের। একই পরিস্থিতি হয় অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রেও। কারণ কোনওভাবে যদি নদী পার হওয়াও যায়, কাছের হাসপাতাল আরও ৩৯ কিলোমিটার দূরে। ফলে অনেক অন্তঃসত্ত্বাই রাস্তায় প্রাণ হারান। প্রতি বছরই নদীর জন্য অন্তত দুজনের প্রাণ যায় বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাই এবার একজোট হয়েছে তিন গ্রাম। সেতু না তৈরি করলে, নির্বাচন বয়কট করা হবে বলে সব দলকেই জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। মহোরহর নদীর উপর দিয়ে এভাবেই পারাপার করেন স্থানীয়রা।