ভারতে পর পর হামলার ছক, গুজরাতে পিস্তল-কার্তুজ সহ ধৃত ৩ আইএস জঙ্গি
বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
আমেদাবাদ: জঙ্গিরা বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষবাষ্প। যে বিষ গোটা শহরের মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে সক্ষম। না, কোনও ওয়েব সিরিজের দৃশ্য নয়। সম্ভবত একই কায়দায় ভারতে পরপর হামলার ছক কষেছিল আইএস জঙ্গিরা। তার সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র তো আছেই। কিন্তু গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অস্ত্র হাতবদলের সময়ই অভিযান চালায় গুজরাত পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস)। তাতেই ধরা পড়ে তিন জঙ্গি। তাদের একজন ডাক্তার। ধৃতদের থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি গ্লক ও একটি বেরেত্তা পিস্তল, ৩০ রাউন্ড কার্তুজ, ৪ লিটার ক্যাস্টর অয়েল।
কিন্তু এত তেল কী কাজে লাগত? এখানেই উঠে এসেছে জঙ্গিদের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের কথা। জেরায় তারা জানিয়েছে, ‘রাইসিন’ বিষ তৈরির জন্য ওই ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা হত, যা সায়ানাইডের থেকেও কয়েক হাজার গুণ বেশি প্রাণঘাতী। অর্থাত্, আর শুধু গুলি নয়, বিষ ছড়িয়েও গণহত্যার ছক কষেছিল আইএস। গুজরাত এটিএসের ডিআইজি সুনীল যোশি জানিয়েছেন, ধৃতদের নাম আহমেদ মহিউদ্দিন সৈয়দ, মহম্মদ সুহেল এবং আজাদ সুলেমান সাইফি। হায়দরাবাদের বাসিন্দা ৩৫ বছরের সৈয়দ চীনের একটি মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেছে। অপর দুই অভিযুক্ত সুহেল ও আজাদ উত্তরপ্রদেশের শামলি ও লখিমপুরের বাসিন্দা। দুজনেই মাদ্রাসায় পড়ার সময় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। লখনউ, দিল্লি, আমেদাবাদের জনবহুল এলাকা তারা ঘুরে দেখেছিল বলে জানতে পেরেছে এটিএস। গিয়েছিল কাশ্মীরেও।
সুনীল জানিয়েছেন, তিনজনের উপর প্রায় এক বছর ধরে নজর রাখা হচ্ছিল। খবর মেলে, সৈয়দ আমেদাবাদে আসার পরিকল্পনা করেছে। আজাদ ও সুহেল রাজস্থানের হনুমানগড় থেকে অস্ত্র ও বাকি সরঞ্জাম নিয়ে আসে। সেগুলি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল গান্ধীনগরের একটি কবরখানায়। ওই অস্ত্রগুলি নিয়ে হায়দরাবাদে যাওয়ার কথা ছিল সৈয়দের। কিন্তু শুক্রবার গান্ধীনগরের আদালাজ টোল প্লাজার কাছে তাকে ধরে ফেলে এটিএস। তার ফোনের সূত্র ধরে বাকি দুজনকেও ধরা হয়। ডিআইজি আরও জানিয়েছেন, সৈয়দের ফোন ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, আবু খাদিম নামে ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রভিন্সের এক সদস্যের যোগাযোগ ছিল। খাদিমই সৈয়দকে ভারতবিরোধী কার্যকলাপের জন্য টাকা জোগাড় ও জঙ্গি নিয়োগের কাজে লাগিয়েছিল। আর কারা এই হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, তা জানতে তদন্ত চালাচ্ছে এটিএস।
অপারেশন সিন্দুরের পর পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি ভারতে নাশকতার ছকে বদল এনেছে বলে জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা। আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছিল। জুলাই মাসে বেঙ্গালুরুতে অভিযান চালিয়ে আল-কায়েদার শাখা সংগঠন একিউআইএসের এক মহিলা সহ পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছিল গুজরাত এটিএস। এরপর উত্সবের মরশুমে চার রাজ্যে অভিযান চালিয়ে আইএসের পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এবার ফের জালে আইএসের তিন জঙ্গি। ফলে গোয়েন্দাদের কপালের ভাঁজ আরও চওড়া।