চাষের এলাকা বাড়লেও তুলাইপাঞ্জির উত্পাদন কমার আশঙ্কা কৃষকদের
বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: আগামী মাসেই তুলাইপাঞ্জি ধান খেত থেকে কৃষকের ঘরে উঠবে। কিন্তু এই মরশুমে তুলাইপাঞ্জি চালের উৎপাদন নিয়ে এখন থেকে শঙ্কায় কৃষকরা। কৃষিদপ্তরের প্রচেষ্টা থাকলেও সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন তুলাই চাষিরা। এমনটাই দাবি কৃষকদের। চলতি বছর চাষের এলাকা বৃদ্ধি পেলেও তার সুফল মিলবে কি না, সন্দিহান তাঁরা।
তুলাইপাঞ্জির সুখ্যাতি জেলার গণ্ডি পেরিয়ে আগেই জাতীয়স্তরে জায়গা করে নিয়েছে। রয়েছে জিআই ট্যাগও। জেলা কৃষি দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তর দিনাজপুরের মোহিনীগঞ্জ, বিহোর, ভগিলতা, রুনিয়া, মছলন্দপুর গ্রাম সহ কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার, রায়গঞ্জের ব্লকের কিছু জায়গায় এই ধান চাষ হয়। কিন্তু সাধারণ চালের থেকে তুলাইপাঞ্জির উৎপাদন কম। বেশি আয়ের আশায় অন্য শস্য ফলানোর তাড়াহুড়োর জন্য এমনিতেই তুলাইপাঞ্জির চাষ তলানিতে ঠেকেছে। এই অবস্থায় মন-থার প্রভাবে ঝড় বৃষ্টিতে তুলাইপাঞ্জি চাষের ক্ষতি হয়েছে। সুগন্ধী ধানের গাছ খেতেই শুয়ে গিয়েছে বলে দাবি চাষিদের। ধান কাটার আগেই তাই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
তুলাইপাঞ্জি ধানচাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের সংস্থা ফিয়ামের সদস্য চিন্ময় দাস বলেন, গতবার আমরা সংস্থার তরফে ৫৫ বিঘা জমিতে তুলাই চাষ করেছিলাম। এবার ৮০ বিঘা জমিতে তুলাই চাষ করা হয়েছে। কিন্তু এবার আবহাওয়ার কারণে বড়সড় প্রভাব পড়েছে। ধানখেত নষ্ট হয়েছে। আমাদের যা পর্যবেক্ষণ তাতে জেলায় এবার উৎপাদন কম হতে পারে।
এই ধান চাষ কমে যাওয়ার পিছনে আরও একটা কারণ, ভুট্টা চাষ। যেহেতু এই ধান অন্য ধানের একমাস পর খেত থেকে ওঠে, তাই ভুট্টা চাষ শুরু করতে দেরি হয়। চাষিরা ভুট্টা চাষের জন্য তুলাই চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
চিন্ময় বলেন, উৎপাদন কমলেও সারাবছর রায়গঞ্জের বাজারে তুলাই পাওয়া যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ভেজাল মিশিয়ে সারাবছর তুলাইয়ের নামে চাল বিক্রি করে। একই অভিমত কালিয়াগঞ্জ কৃষি উদ্যোগ প্রোডিউসার কোম্পানির বেলাল রহমানেরও। কালিয়াগঞ্জের এবার তুলাই চাষে ক্ষতি হয়েছে। তবে আশার কথা শুনিয়েছেন ইটাহার ব্লকের সোনাডাঙ্গি এফপিসির রেনু খাতুন। তিনি বলেন, এবার আমাদের সংস্থার চাষিরা ভালো পরিমাণে তুলাই চাষ করেছেন। সংস্থার চাষিরা গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ জমিতে তুলাই ফলিয়েছেন।
জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে দাবি, তুলাইপাঞ্জি ধানের গাছ এমনিতেই খুব স্পর্শকাতর। একটু ঝড় বৃষ্টিতেই ওই চাষ প্রভাবিত হয়। তবে কৃষি দপ্তর তুলাই চাষে উৎসাহ বাড়াতে, এলাকা বৃদ্ধি করতে বীজ প্রদান করা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল।