পঞ্চায়েতের সিল নকল করে জাল বার্থ সার্টিফিকেট, রতুয়ায় পুলিশের জালে ২
বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, চাঁচল: মালদহের রতুয়ায় ফাঁস হল জাল নথি তৈরির চক্র। ২৯টি জাল সিল, জন্ম শংসাপত্র, মার্কশিট ও ট্রান্সফার সার্টিফিকেট উদ্ধার করল পুলিশ। রতুয়া থানার চাঁদমণি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আন্ধারু গ্রাম থেকে পুলিশ জালিয়াতির সামগ্রী উদ্ধার করার পাশাপাশি দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা হল আব্দুল খালেক ওরফে বুলেট ও তার ভাইপো শরীফ খান ওরফে রাজু। উদ্ধার হওয়া ২৯টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিলের মধ্যে রয়েছে তৃণমূল পরিচালিত সামসী ও চাঁদমণি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত, শ্রীপুর অঞ্চল হাইস্কুল, মিলনগড় ও বাটনা হাই মাদ্রাসার সিল। পাশাপাশি, কয়েকটি নকল ট্রান্সফার সার্টিফিকেট, মার্কশিট ও জন্ম শংসাপত্রও উদ্ধার হয়েছে। আন্ধারু গ্রামে জলাশয়ের ধারে ক্যারিব্যাগে মোড়ানো অবস্থায় সেগুলি পাওয়া যায় রবিবার সকালে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দীর্ঘদিন এই জালিয়াতি চক্র সক্রিয় ছিল এলাকায়। শরীফের ক্যাফেতে এই কারবার চলত।
এক ব্যক্তি শরীফের কাছে থেকে দুই ছেলের জন্মের শংসাপত্র নেন। কিন্তু আধার কার্ড করাতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন সেগুলি জাল। তিনি পুলিশে অভিযোগ জানালে শনিবার রাতে শরীফ ও খালেককে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করেই খালেকের বাড়ির পিছনের জলাশয়ের ধার থেকে ক্যারিবাগে মোড়ানো সিল ও নথি উদ্ধার হয়েছে।
এসআইআর পর্ব শুরু হওয়ায় নথি জোগাড়ের হিড়িক চলছে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য বিভিন্ন নথি প্রয়োজন। এই সুযোগে জালিয়াতি শুরু করেছিল ধৃতরা। উদ্ধার হওয়া জাল সিলের মধ্যে বাটনা হাই মাদ্রাসার নামও রয়েছে। প্রধান শিক্ষক মীর মহম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, এই ঘটনায় আমরা হতবাক। পুলিশ পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রয়োজনে আইনের দ্বারস্থ হব।
তদন্তে উঠে এসেছে, তৃণমূল পরিচালিত সামসি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিল এবং প্রধানের সইও জাল করা হয়েছে। প্রধান মনীষা দাস বলেন, এসআইআর আবহে এই ধরনের জালিয়াতি বাড়তে পারে। মনে হচ্ছে চক্রটি অনেকদিন সক্রিয়।
ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির উত্তর মালদহের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক সিঙ্ঘানিয়ার অভিযোগ, খালেক এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। তার কাছ থেকে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের সিল উদ্ধার হয়েছে। তৃণমূলের ইন্ধনেই এই জাল নথি তৈরির চক্র সক্রিয় ছিল এলাকায়। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে মালদহ জেলা তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সির মন্তব্য, ধৃতদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ আইন মেনে পদক্ষেপ করছে।
চাঁচলের এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, কতদিন এই চক্র সক্রিয়, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে।