সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: দিনে দুপুরে দুষ্কৃতী তাণ্ডবে উত্তপ্ত হয়ে উঠল নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের বিপ্রনগর এলাকা। বাড়ি ও একের পর এক বাইক ও স্কুটিতে দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর চালায়। দুষ্কৃতীদের টার্গেটে ছিলেন এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দেবনাথ। রবিবার তাঁরই বাড়িতে ও গ্যারেজে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। রেহাই পাননি বিশ্বজিৎবাবুর পরিবারের সদস্যরাও। স্থানীয় একটি ক্লাবের সামনে থাকা বহু বাইকেও ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে তা ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্যারেজে গাড়ি সারানোর টাকা চাওয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। তারপরই দুষ্কৃতী গ্যাং বিশ্বজিৎবাবুর উপর চড়াও হয়। তারা বিশ্বজিৎবাবুকে বেধড়ক মারধর করে। এরপর বিশ্বজিৎবাবুর মোটরসাইকেল গ্যারেজ ও বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বাড়িতে ভাঙচুরের সময় বাধা দিলে গেলে রেহাই পাননি তাঁর পরিবারের মহিলা সদস্যরাও। তাঁদেরও মারধর করা হয়। এরপর দুষ্কৃতীরা পাশের মিলন সমিতি ক্লাব ও ক্লাবের সামনে থাকা বাইকে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া এলাকার অন্য দু’টি বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি বাইক ও স্কুটি ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে জোটবদ্ধ হয়ে তাঁরা নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর রুটে মায়াপুর মোড়ের কাছে রাস্তা অবরোধ করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে রাস্তা অবরোধ চলে। খবর পেয়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, এদিন সকালে আমি আমার গ্যারেজে কাজ করছিলাম। তখন পাশেরপাড়ার মিঠুন তিন-চার জনকে নিয়ে দোকানে আসে। এক সপ্তাহ আগে মিঠুন আমার গ্যারেজে গাড়ি সারিয়ে ছিল। ওর কাছে আমি ১৭০০ টাকা পেতাম। আমি প্রাপ্য টাকা চাইতেই ও বলল, যা পারবি করে নে। আমি তোকে টাকা দেব না। তারপর ও সঙ্গে সঙ্গে সাহেব নামের এনজনকে ফোন করে। কিছু সময়ের মধ্যেই সাহেব গাড়িতে করে পাঁচ-ছ’জন ছেলে নিয়ে আমার দোকানে চলে আসে। পরে আরও ২০-২২ জন আসে। ওরা সবাই মিলে আমাকে ফেলে মারধর করে। আমি ভয়ে বাড়ির দিকে পালিয়ে যাই। ওরা আমার পিছু পিছু বাড়ি গিয়ে আমার স্ত্রী ও মাকেও মারধর করেছে। আমার ভাইয়ের বউ অন্তঃসত্ত্বা। তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। নবদ্বীপ থানায় সাহেবের বিরুদ্ধে অনেক কেস রয়েছে।
বিশ্বজিৎবাবুর স্ত্রী স্বপ্নাদেবী বলেন, ওরা ১০-১২ জন মিলে স্বামীকে ধাওয়া করছিল। কোদাল, হাতুড়ি, রড দিয়ে ওকে ফেলে মারছিল। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও মারধর করে। আমার বৃদ্ধা শাশুড়িকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সাহেবের ভয়ে কি আমরা এলাকায় থাকতে পারব না?
নবদ্বীপ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কল্লোল কর বলেন, দিনের পর দিন এই এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে সাহেব ও তার দলবল। কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তির দাবি করছি। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত মূল দুই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।