নেতার ছায়াসঙ্গী বলেই ছাড়!, কাজ না করা সাফাইকর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে কৃষ্ণনগর পুরসভা
বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কাজ না করে নেতার ছায়াসঙ্গী হয়ে বেতন পাচ্ছেন বেশকিছু সাফাই কর্মী। এবার সেইসব সাফাইকর্মীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে কৃষ্ণনগর পুরসভা। অভিযোগ, শহরের সাফাই কাজে নিযুক্ত অনেকেই কাজ করেন না। তাঁরা নেতাদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করেন। পুরসভার রেকর্ডে সাফাইকর্মী হিসারে নাম থাকলেও কাজের ক্ষেত্রে তাঁদের দেখা মেলে না। দিনের পর দিন হাজিরা খাতায় সই করে যাচ্ছেন। ফলে, কর্মীর অভাবে শহরের নানা ওয়ার্ডে আবর্জনা জমে নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ছে।
কৃষ্ণনগর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, খাতায়কলমে প্রায় তিনশো সাফাইকর্মী রয়েছেন। কিন্তু, তারমধ্যে অনেক কর্মী নিয়মিত কাজে আসেন না। আর কিছু সাফাইকর্মী হাজিরা খাতায় সই করেই হাওয়া হয়ে যান। ফলে পুরসভার দৈনন্দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসতেই শুরু হয়েছে কঠোর পদক্ষেপের পরিকল্পনা।
পুরসভার এক কর্তা জানান, কাজে উপস্থিতি না থাকলেও নিয়মিত বেতন তুলছেন অনেক কর্মী। এবার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা কাজে আসছেন না, কারা উপস্থিতি দিয়ে মাঠে নামছেন না তার বিস্তারিত তালিকা তৈরি হচ্ছে।
সম্প্রতি পুরসভার অচলাবস্থা ও নাগরিক পরিষেবার ঘাটতি নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিল কৃষ্ণনগর পুরবোর্ড। এরপর নগরোন্নয়ন দপ্তর পুরবোর্ড ভেঙে দিয়ে কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরীকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি শহরের আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে বিশেষ জোর দিয়েছেন। মহকুমা শাসক বলেন, আমরা শহরের সাফাই ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার উপর জোর দিচ্ছি। নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার হচ্ছে কি না, তা নজরদারির জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রত্যেক সাফাই কর্মীকে কাজ করানোই লক্ষ্য।
এই নজরদারির অংশ হিসেবে পুরসভার তরফে একটি ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও চালু করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনের আবর্জনা পরিষ্কারের ছবি আপলোড করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের তত্ত্বাবধায়কদের। এর মাধ্যমে কাজের বাস্তব পরিস্থিতি বোঝা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাতে সাফাইয়ের কাজে গতি এসেছে। পরিষ্কার করা হয়েছে গোদাডাঙা এলাকায় রাস্তার উপর ঢাই হয়ে পড়ে থাকা আবর্জনাও। সকালের মধ্যেই শহরের আনাচে কানাচে পড়ে থাকা আবর্জনা তুলে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু, এখনও একশো শতাংশ সাফাই কর্মী কাজে নামেননি।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে সাফাইকর্মীদের জন্য পুরসভার তরফে বায়োমেট্রিক হাজিরার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যাতে কর্মীদের ফাঁকি ধরা যায়। কিন্তু সেই উদ্যোগের বিরুদ্ধেই তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সাফাইকর্মীদের একাংশ। বেশ কয়েকদিন ধরে চলে কর্মবিরতি ও আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তবে এবার সেই ছাড়ের দিন শেষ হতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। অনেকেই মনে করছেন, নেতাদের ছায়াসঙ্গী হয়ে কাজ এড়ানোর সুযোগ আর থাকবে না। পুর কর্তৃপক্ষের আশা, নতুন নজরদারির ফলে শীঘ্রই শহরের সাফাইয়ে কাজে শৃঙ্খলা ও গতি আসবে।