• দুই ছেলে বাংলাদেশে স্কুল শিক্ষক, বাবা-মা দিনমজুরি করেন এদেশে
    বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: দুই ছেলে বাংলাদেশে স্কুল শিক্ষক। কিন্তু তাঁরা বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখেন না। ছেলেদের উপর অভিমানে কাঁটাতার পেরিয়ে এদেশে চলে এসেছিলেন বাবা-মা। অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে পেট চলে তাঁদের। এসআইআর শুরু হতেই  ঘোর দুশ্চিন্তায় বৃদ্ধ দম্পতি। 

    কেতুগ্রাম-২ ব্লকের গঙ্গাটিকুরির কালীপদ রায় তাঁর স্ত্রী অমরি রায় দশ বছর ধরে এ দেশে বসবাস করছেন। আগে কেতুগ্রামের শান্তিনগরে থাকতেন। কালীপদবাবু সত্তরোর্ধ্ব। দুজনে অন্যের জমিতে মজুর খেটে পেট চালান। তাঁদের তিন ছেলে বাংলাদেশে। দুই ছেলে শিক্ষক। চাকরি পাওয়ার পর থেকে তাঁরা বাবা-মায়ের খেয়াল রাখেন না। অভিমানে বৃদ্ধ দম্পতি দেশ ছেড়েছিলেন। তারপরেও বাবা-মায়ের খোঁজ নেননি ছেলেরা। কালীপদবাবু সস্ত্রীক ভারতে এসে এদেশের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেননি। তাঁদের এখন দুঃশ্চিন্তা এসআইআর হলে ঠাঁই কোথায় হবে। 

    হাঁপানির রোগী কালীপদবাবু একরাশ অভিমান নিয়ে বলেন, আর ওদেশে ফিরে যাব না। নিজের ছেলেরাই যখন খোঁজ রাখে না, তখন ওদেশের মায়া বাড়িয়ে লাভ কী। আমার যা শরীরের অবস্থা, তাতে খুব বেশিদিন আর বাঁচবও না। অমরি দেবী বলেন, কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতিতে ছেলেদের খোঁ‌ ঩নিতে ফোন করেছিলাম। ওরা বলেছিল, চিকিৎসা করাতে ভারতে আসবে। কিন্তু কই আর এলই তো না! 

    কালীপদ রায় বাংলাদেশে ফরিদপুর উপজেলার মোদোখালি থানার গাবুরদিয়া গ্রামে থাকতেন। বড় ছেলে উৎপল গ্রামের স্কুলেই শিক্ষকতা করেন। মেজ ছেলে রিটন স্কুল শিক্ষক ও ছোটো ছেলে উজ্জ্বল সেখানেই কাজ করেন। দশ বছর আগে ছেলেদের উপর অভিমান করে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন কালীপদবাবু। অস্ত্রোপচারের পর আর বাংলাদেশে ফিরে যাননি। এখানেই জমি কিনে বসবাস করছেন।

    কালীপদবাবু বলেন, দেশভাগে আমার পরিবারটা ছারখার হয়ে গেল। ১৯৭১ সালের পর মা ও ভাইদের নিয়ে এপারে একবার এসেছিলাম। কিছুদিন থাকার পর আবার ওপারের সরকার আমাদের নিয়ে গেল। বাড়িঘর সব লুটপাট করেছিল। আবার এপারে এসেছিলাম৷ কিন্তু চেষ্টা করেও ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারিনি। এখন চিকিৎসার খরচ জোগাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছি। ছেলেরা এখন শিক্ষক। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মরে গেলে যেন একবার কাঁটাতার পেরিয়ে আসে ওরা, এটাই চাই। যতই হোক নিজের সন্তান তো! কালীপদবাবুর প্রতিবেশী বুলুরানি মণ্ডল, তাঁর স্বামী রমেনবাবু ও ছেলে দেবাশিসকে নিয়ে থাকেন। তাঁরাও দশ বছর আগে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন৷ বুলুরানি বলছিলেন, আমরা কেউই এদেশের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারিনি। দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে আমাদের কিচ্ছু করার নেই। কেতুগ্রাম-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বিশ্বাস বলেন, দুই পরিবারের ভোটার তালিকায় নাম নেই, এটা আমার অজানা। খোঁজ নিয়ে দেখছি। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)