রামপুরহাট বিধানসভার দায়িত্ব থেকে অতনুকে সরাল বিজেপি
বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: কয়েক মাস বাদেই বিধানসভা নির্বাচন। চলছে এসআইআর। এই আবহেই পদ্ম শিবিরের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া। তীব্র অসন্তোষ। যার জেরে রামপুরহাট বিধানসভার ‘ইনচার্জ’ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল অতনু চট্টোপাধ্যায়কে। তারপরও অস্বস্তি কাটছে না জেলার গেরুয়া নেতাদের।
ছাব্বিশের নির্বাচন পাখির চোখ বিজেপির। গত ২৯ অক্টোবর প্রতিটি বিধানসভার দলীয় ইনচার্জের নাম ঘোষণা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তখনই রামপুরহাট বিধানসভার ইনচার্জ করা হয় দলের প্রাক্তন জেলা সাধারণ সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায়কে। এরপরই দলের অভ্যন্তরে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। দলীয় সূত্রের খবর, মণ্ডল সভাপতিরা অতনুকে ইনচার্জ করা নিয়ে নেতৃত্বের কাছে তীব্র আপত্তি জানান। জেলাস্তরের এক নেতা বলেন, ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর অতনু তৃণমূলে যোগ দেন। পরে ধ্রুব সাহার (বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি) হাত ধরে ফের বিজেপিতে ফেরেন। এই নেতাকে কী করে ইনচার্জ মেনে নেওয়া যায়। তাছাড়া অতনুর বাড়ি ময়ূরেশ্বর বিধানসভা এলাকায়। তিনি এই বিধানসভার বা লোকসভার বাসিন্দাও নন। তার জন্য দলের অন্দরে অসেন্তাষ ছিল। যার জেরে তাঁকে সরিয়ে মুরারই বিধানসভার ইনচার্জ করা হয়েছে। আর মুরারই বিধানসভার ঘোষিত ইনচার্জ ময়ূরেশ্বরের বাসিন্দা তাপস মণ্ডলকে রামপুরহাট বিধানসভার ইনচার্জ করা হয়েছে। যদিও এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত দলের তরফে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। তবে জেলা সভাপতির কাছ থেকে সিগন্যাল পেয়ে তাপসবাবু ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। বিধানসভার দলীয় কার্যকর্তাদের নিয়ে মিটিংও সেরে ফেলেছেন। তাপসবাবু বলেন, জেলা সভাপতি আমাকে মুরারই বিধানসভার ইনচার্জ থেকে সরিয়ে রামপুরহাট বিধানসভার ইনচার্জ করেছেন। রামপুরহাটে মিটিংও করেছি। তাতে ভালো সাড়া মিলছে। মুরারইয়ে অতনু চট্টোপাধ্যায়কে ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে অতনুকে সরানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রামপুরহাটে কিছু অসুবিধে হচ্ছিল, তাই অতনুকে মুরারইয়ের দায়িত্ব দিয়েছে।
যদিও তারপরও অস্বস্তি কাটেনি গেরুয়া শিবিরের। কারণ, মুরারইয়ের কার্যকর্তারাও অতনুকে ইনচার্জ করা নিয়ে আপত্তি তুলতে শুরু করেছেন। মুরারই ৫ নম্বর মণ্ডল সভাপতি তারক ভকত বলেন, অতনু তৃণমূলে যোগ দিয়ে মোদি ও অমিত শাহকে তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁকে কী করে ইনচার্জ মেনে নেব। শুধু আমি নই, একাধিক মণ্ডল সভাপতির এই নিয়ে আপত্তি রয়েছে। এলাকার এক কার্যকর্তা বলেন, অতনুকে মেনে নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। তাছাড়া স্থানীয় নেতৃত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে বাইরে থেকে লোক এনে বসিয়ে দিচ্ছে। ভালো ফল হলে নামটা ওই কামাবে। তাই কীসের জন্য খাটতে যাবে স্থানীয় নেতৃত্ব। অতনুবাবুকে ফোন করা হলে তিনি শুধু বলেন, আমাকে অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি।
এ ব্যাপারে ধ্রুব সাহাকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মণ্ডল বলেন, রাজ্য নেতৃত্ব বিধানসভা ভিত্তিক ইনচার্জ ঘোষণা করেছে। তারপর কাজের সুবিধার্থে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এটা ফাইনাল কিছু নয়। আলোচনা করেই তাপস মণ্ডলকে রামপুরহাট বিধানসভার ইনচার্জ করা হয়েছে। এবার রাজ্য নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।
এই বিষয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি তৃণমূলের বীরভূম জেলা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায়। তীব্র কটাক্ষের সুরেই তিনি বলেন, পুরনো ও নতুন নিয়ে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব ভীষণ আকার নিয়েছে। অতনুবাবু বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বর জন্যই দল ছেড়ে তৃণমূলে এসেছিলেন। কিছুদিন থাকার পর আবার বিজেপিতে ফিরে যান। যার জন্য নতুন কর্মীরা তাঁকে মানতে পারছেন না। যদিও ওটা ওদের দলের বিষয়। আমাদের মাথাব্যথা নেই।