নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: ডিউটির ফাঁকে সময় পেলেই ধরেন দোতারা। বাউল গানের মাধ্যমেই ছড়িয়ে দেন ট্রাফিক সচেতনতার বার্তা। দুবরাজপুরের ট্রাফিকে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার লক্ষ্মণ আঢ্য পুলিশ মহলে রীতিমতো প্রশংসিত হচ্ছেন।
সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় রাজ্য পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ারদের ‘কুকীর্তির’ কম উদাহরণ নেই। কোথাও দাদাগিরি, কোথাও চোখরাঙানি, কোথাও আবার রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে তোলা আদায়ের অভিযোগ। তবে, দুবরাজপুর ট্রাফিকে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার লক্ষ্মণ কিছুটা ব্যতিক্রমী চরিত্র। সিভিক ভলান্টিয়ারের ডিউটির ফাঁকে হাতে তুলে নেন দোতারা। কখনও দোতারা বাজিয়ে, কখনও বা খালি গলায় গান গেয়ে তা আপলোড করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কালেভদ্রে সুযোগ আসে কোনও মঞ্চে গান গাওয়ার।
সম্প্রতি দুবরাজপুর ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সন্তু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আসে লক্ষ্মণের এই প্রতিভা। সন্তুবাবু বলেন, ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের এই প্রতিভার ব্যাপারে আমার জানা ছিল না। সম্প্রতি জানতে পারি যে ভালো বাউল গান করে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখলাম। তখনই আমি যোগাযোগ করি। বাউল গানের মাধ্যমে ওকে দিয়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ কর্মসূচির প্রচার করানোর ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করি। তবে, শুরুতে কিছুটা নিমরাজি ছিল। দীর্ঘদিন অভ্যাস না থাকার অজুহাত দিচ্ছিল। যদিও এখন দেখছি, ভালোই বাউল করছে।
রবিবার দুবরাজপুর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দরবেশ মোড়ে একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়। সেখানেই সিভিক লক্ষ্মণ বাউল গান গেয়ে পথ চলতি মানুষকে হেলমেট পরা সহ ট্রাফিক আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন। গানের মাধ্যমে প্রচার করেন, প্রাণ বাঁচাতে হেলমেট পরে গাড়ি চালানো কতটা জরুরি। কেন ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিত, কেনই বা নেশা করে গাড়ি চালানো উচিত নয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই সিভিক দুবরাজপুরে কর্মরত হলেও বাড়ি খয়রাশোলে। লক্ষ্মণের দাবি, বাউল সম্পর্কে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর নেই। তবে, ছোট থেকে বাউল গানের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। নিয়মিত অভ্যাসও করেন। মায়ের মৃত্যুর পর মুষড়ে পড়েছিলেন। বাউল গানেই তাঁর আনন্দ। লক্ষ্মণ বলেন, ছোটবেলায় বাবা নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে। লোকের বাড়িতে কাজ করে মা বড় করে তুলেছে। বহু বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মায়েরও মৃত্যু হয়। বর্তমানে দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়েই তাঁর অভাবের সংসার। • নিজস্ব চিত্র