আহমদপুরে বাম শাসনে বন্ধ সুগার মিলের জায়গায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক
বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: সাইরেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই কবেই। যদিও, স্থানীয়দের আশা ছিল, ফের খুলবে বন্ধ সুগার মিল। কাজের সুযোগ পাবে নতুন প্রজন্ম। তবে, আহমদপুরের সুগার মিল হয়তো আর খুলবে না কোনওদিনই। সুগার মিলের জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে সেই জায়গা পরিদর্শন করেন বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল, বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ। প্রত্যেকেরই প্রতিশ্রুতি, শিল্প হবে। কাজ পাবেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৫ সালে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আহমদপুরে ৫৫একরের বেশি জমিতে ন্যাশনাল সুগার মিল নামে ওই চিনির কলটি স্থাপিত হয়। ১৯৬০-৬১ সালে উত্পাদন শুরু হয়। প্রায় ৭০০ কর্মী কাজ করতেন। যদিও ১৯৬৪সালে হঠাৎ করেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৩সালে প্রাক্তন বিধায়ক সুনীতি চট্টরাজের উদ্যোগে মিলটি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন রাজ্য সরকার। মিলের পরিবর্তিত নামকরণ হয় আহমদপুর সুগার মিল। মিলের পরিচালনার দায়িত্বে ছিল পশ্চিমবঙ্গ চিনি উন্নয়ন নিগম। ১৯৭৪-’৭৫ সাল থেকে ফের উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু নানা টানাপোড়েনে ২০০২-’০৩ সালে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৫ সালে আগাম অবসর দেওয়া হয় কর্মীদের। পাঁচ বছর পর সুগার মিলের সমস্ত মেশিনপত্র নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
ফের মিল চালু হবে, ফের বেজে উঠবে সাইরেন, মিল বন্ধ হওয়ার প্রায় এক দশক পর্যন্ত এই আশা ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। যদিও জমিজটের কারণে বর্তমান সরকার বিশেষ কিছুই করে উঠতে পারেনি। আশাও ছেড়েছিলেন স্থানীয়রা। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এখন ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক। যদিও বিধায়ক অভিজিৎবাবু বলেন, ওই সুগার মিলের জায়গায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। বিভিন্ন শিল্প সংস্থা আসবে। বিপুল কর্মসংস্থান হবে স্থানীয়দের।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরিতে এসআরডিএর চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডলেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তিনিই প্রথম ওই বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এনেছিলেন। অনুব্রত বলেন, সুগার মিলটা অনেকদিন পড়েছিল। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হলে ভালোই হবে।
প্রশাসনের আশা, উদ্যোগপতিদের নজর কাড়তে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সংযোগকারী রাস্তা, পর্যাপ্ত আলো সহ জলের বন্দোবস্ত করা হবে। আগামী দিনে একাধিক ছোট-বড় কারখানা হলে জেলার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। জেলায় নতুন করে কর্মসংস্থান হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বোলপুরের বিশ্ববাংলা বিদ্যালয়ে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় ৮০০জন উদ্যোগপতিকে নিয়ে শিল্প সম্মেলন বা সিনার্জি আয়োজন করে রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তর। প্রশাসন সূত্রের দাবি, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পে মধ্যে প্রায় ১৮৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। এরমধ্যে বীরভূমে ৩৭১ কোটি টাকা এবং মুর্শিদাবাদে ১৪৭৯কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব মিলেছে। এরফলে প্রায় ৪৩ হাজার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে।