• উদ্যোগী ডাক বিভাগ, এক ফোনে দেশের যে কোনও ঠিকানায় যাবে বাংলার বালুচরি
    বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • উজ্জ্বল পাল, বিষ্ণুপুর: দু’টি বিশাল সাইজের পোড়ামাটির ঘোড়া কিনে নাজেহাল অবস্থা অমিয়বাবুর। সপরিবারে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ার পাঁচমুড়ায়। সদ্য কেনা ফ্ল্যাট সাজাবেন বলে শখ করে কিনে ফেলেছেন। সেই সঙ্গে কিনেছেন খান তিনেক বালুচরি শাড়ি, ডোকরার ওয়াল হ্যাঙ্গিং, পাথরের ছোটোখাটো সামগ্রী। কেনার সময় তো আর বুঝতে পারেননি যে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে কী হ্যাপা পোহাতে হবে! ভালোভাবে প্যাকিং করে গাড়িতে তুলে দিয়েও শান্তি নেই। সারাক্ষণ ভয়, এই বুঝি সব ভেঙে গেল! 

    জঙ্গলঘেরা ঝাড়গ্রাম হোক বা লালমাটির বাঁকুড়া—দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকদের এই ধরনের সমস্যা এবার মিটতে চলেছে। কারণ, এবার দক্ষিণবঙ্গের সমৃদ্ধ হস্তশিল্পকে দেশের যে কোনও প্রান্তে সুলভে পৌঁছে দেবে ডাক বিভাগ। এক ফোনেই ডাক বিভাগের কর্মীরা পৌঁছে যাবেন শিল্পী বা নির্দিষ্ট বিক্রেতার কাছে। বালুচরি শাড়ি হোক বা টেরাকোটার সামগ্রী—যে কোনও হস্তশিল্প সামগ্রীর ক্ষেত্রেই মিলবে এই সুবিধা। ডাক বিভাগের এই উদ্যোগে খুশি হস্তশিল্পীরা। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরাও। কারণ, অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও নিয়ে যাওয়ার সমস্যার কথা ভেবে ভারী জিনিসপত্র কিনতে চান না পর্যটকরা। ডাক বিভাগের কল্যাণে সেই সমস্যা মিটতে চলেছে।    

    রেল ডাক সেবার দক্ষিণবঙ্গ জোনের ডেপুটি ম্যানেজার ভাস্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন হস্তশিল্প স্বল্প খরচে দেশের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গোটা দেশে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার পোস্ট অফিস রয়েছে। আছেন প্রায় তিন লক্ষ পোস্টম্যান। এত বড় নেটওয়ার্ক আরও কোথাও পাওয়া যাবে না। তাই লজিস্টিক পোস্টের মাধ্যমে শিল্পীদের থেকে সংগ্রহ করা সামগ্রী মেল ভ্যানে চাপিয়ে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেব আমরা।’ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এর জন্য আলাদা করে কোনও খরচ করতে হবে না। পার্সেল স্পিড পোস্ট করার খরচটুকুই বহন করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাকে। পাঁচমুড়ার এক টেরাকোটা শিল্পী বলছিলেন, ‘বাইরে থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। নিয়ে যাওয়ার অসুবিধার জন্য অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও কিনতে চান না। বেসরকারি ক্যুরিয়ার সার্ভিসের খরচ বেশি। ডাক বিভাগ যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তাতে আমরা উপকৃত হব।’ বিষ্ণুপুরের এক বালুচরি শিল্পী বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বালুচরির অর্ডার পাই। কিন্তু পাঠাতে সমস্যা হয়। সরকারি ডাকে পাঠানো গেলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই স্বস্তি পাবেন।’ বাঁকুড়া রেল ডাক সেবার সাব রেকর্ড অফিসার রমন মজুমদার বলেন, ‘শিল্পীদের পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে অনলাইন ট্র্যাকিং ব্যবস্থাও রয়েছে। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই পণ্যটির অবস্থান জানতে পারবেন। বিক্রেতারা ৭৯০৮৯৭১৯৬৮, ৭৬৭৯৪৭৭৩৮৩ বা ৮৩৩৫৮৬২৭২৯ নম্বরে ফোন করলেই আমাদের কর্মীরা তাঁদের কাছে পৌঁছে যাবেন।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)