• প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান ম্যানগ্রোভের অরণ্যে
    বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: এবার সুন্দরবনে প্লাস্টিকভোজী ব্যাকটেরিয়ার একাধিক প্রজাতির সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। আইসার কলকাতার দুই মহিলা গবেষক এবং এক অধ্যাপকের গবেষণায় উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই প্রথম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্যে এই খোঁজ মিলল। তাই অক্সফোর্ডের ফেমস জার্নালে এই গবেষণাপত্র গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সুন্দরবনের জল প্রাকৃতিক উপায়েই ভেঙে ফেলছে প্লাস্টিককে। তবে, এর সঙ্গে একগুচ্ছ দুশ্চিন্তারও জন্ম দিয়েছে এই গবেষণা।

    প্রতি বিলিয়ন বা ১০০ কোটি নিউক্লিওটাইডে প্রায় ৭৪৮ রকমের প্লাস্টিক ডিগ্রেডিং এনজাইমের সন্ধান মিলেছে। ১৭ ধরনের পলিমার ভেঙে সেগুলি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৭২.৯ শতাংশ সিন্থেটিক বা অপ্রাকৃতিক পলিমার এবং ২৭.১ শতাংশ প্রাকৃতিক পলিমার রয়েছে। গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ি বলেন, সুন্দরবনে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মেলা যেমন অভিনব, তেমনই একটি আশঙ্কার বিষয়ও উঠে এসেছে, যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আগে সেভাবে সামনে আসেনি। প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়াগুলির মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। অর্থাৎ, সেগুলি একদিকে যেমন প্লাস্টিককে ভেঙে প্রকৃতির উপকার করছে, তেমনই আবার ক্ষেত্রবিশেষে সুপারবাগও হয়ে উঠছে।’

    এই দলে থাকা আরেক গবেষক অন্বেষা ঘোষ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রতি মাসে সুন্দরবনের জল সংক্রান্ত পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আমরা কাজ করেছি। দেখা যাচ্ছে, এক ধরনের থ্যালেট বা পলিমার সেখানে পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলি প্লাস্টিক ভেঙেই তৈরি হয়। আবার ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদও এক ধরনের থ্যালেট নিষ্কাশন করে। তবে, উদ্ভিদ থেকে আসা থ্যালেটগুলি প্রাকৃতিক হওয়ায় সেগুলি সহজেই প্রকৃতিতে মিশে যেতে পারে। তবে, প্লাস্টিক থেকে আসা থ্যালেটগুলির মধ্যে অনেক ভারী ধাতু এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশে থাকে। তাই সেগুলি পরিবেশে মিশতেও সময় লাগে।’

    এসব ক্ষেত্রে সমাধান হল, প্লাস্টিকখেকো যেসব ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সুপারবাগ হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকে, সেগুলিকে প্রশমিত করার জন্য অন্য ধরনের ব্যাকটেরিয়াও রাখতে হবে। অর্থাৎ, একাধিক ব্যাকটেরিয়ার গোষ্ঠীকে কাজে একসঙ্গে লাগাতে হবে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ সেভাবেই কাজ করে। তবে, সমস্যা হল প্লাস্টিকের পরিমাণ। যে পরিমাণ প্লাস্টিক বিভিন্ন নদ-নদীর মাধ্যমে ভেসে সুন্দরবনে আসে, সেগুলি প্রাকৃতিকভাবে পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন কৃত্রিমভাবে তৈরি ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠীর মডেল। তবে কৃত্রিমভাবে তৈরি নির্দিষ্ট কোনও মডেলের মাধ্যমে এই কাজ করতে গেলে একাধিক সমস্যা দেখআ দেবে। সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। তাই এখানে এ ধরনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। তাছাড়া, এখানকার বাসিন্দারা নদ-নদী বা খাঁড়ির জল সরাসরি ব্যবহার করেন। তাতে কোনওরকম সংক্রমণ হলে বড় বিপর্যয় হবে। এছাড়া, জলের মধ্যে যেহেতু প্লাস্টিক বর্জ্যগুলি নিয়মিত ভাসমান, তাই কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে সেগুলি ধ্বংস করা সম্ভব নয়। সমস্যার সমাধানে এখনও নিরন্তর গবেষণা চালাতে হবে। আশু সমাধান হিসেবে, এই অঞ্চলে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ করাই একমাত্র পথ।
  • Link to this news (বর্তমান)