• পুকুরের স্পঞ্জ শুষে নিচ্ছে আর্সেনিক ও জিঙ্কের মতো দূষণকারী ভারী ধাতু
    বর্তমান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: জলদূষণের উত্তর কি তবে রয়েছে প্রকৃতির কাছেই? বোস ইনস্টিটিউটের এক বাঙালি বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে হওয়া গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে তেমনই। পুকুরে জন্মানো স্পঞ্জ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন বোস ইনস্টিটিউটের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সসের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ অভ্রজ্যোতি ঘোষ ও তাঁর রিসার্চ টিম। ২০২২-’২৩ সাল জুড়ে এই গবেষণা হয়েছিল সুন্দরবনের সাগর ও ঘোড়ামারা দ্বীপে। আট বিজ্ঞানী-গবেষকের এই দল গবেষণা শেষে জানিয়েছে, সুন্দরবনের পুকুরে থাকা স্পঞ্জ শুষে নিচ্ছে জলে থাকা আর্সেনিক, কোবাল্ট, জিঙ্ক, ক্যাডমিয়ামের মতো দূষণ সৃষ্টিকারী ভারী ধাতু। শুধু তাই নয়, স্পঞ্জে থাকা বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়া ওইসব ভারী ধাতুগুলির বিষ ক্ষয় করে জলদূষণ কমাচ্ছে পরিবেশে।

    বোস ইনস্টিটিউট, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলির বিজ্ঞানী-গবেষকদের এই চমকপ্রদ গবেষণাটি এবছর আগস্টে প্রকাশিত হয়েছে ‘মাইক্রোবায়োলজি স্পেকট্রাম’ নামক জার্নালে। বিখ্যাত গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার ইন্ডিয়া’ও তাদের অক্টোবর সংখ্যায় তুলে ধরেছে এটি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সামুদ্রিক স্পঞ্জ নিয়ে বিদেশে বহু গবেষণা হয়েছে। সুন্দরবনের পুকুরে স্পঞ্জের এই গুণাগুণ নিয়ে এ ধরনের গবেষণা এই প্রথম। গবেষণালব্ধ ফলাফল ভবিষ্যতে ভারী ধাতুর জলদূষণের উত্তর হতে পারে। নদীতে স্পঞ্জের দেখা খুব কম মেলে। এক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে বংশ বিস্তার করিয়ে দূষণ কমানোর জন্য তা ব্যবহার করা যেতেই পারে।

    প্রসঙ্গত, স্পঞ্জ পৃথিবীর প্রাচীনতম বহুকোষী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। জলশোধনের জন্য এর আরেকটি নাম হল ‘প্রাকৃতিক ফিল্টার’। এই গবেষণায় সাগর এবং ঘোড়ামারা— এই দুই দ্বীপের পুকুর থেকে ছয় ধরনের স্পঞ্জ সংগ্রহ করা হয়। গবেষণা চলাকালীন কতগুলি আশ্চর্য জিনিস লক্ষ্য করেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমত দেখা যায়, একই পুকুরে থাকলেও পুকুরের জলে ও স্পঞ্জে রয়েছে আলাদা ধরনের ব্যাকটেরিয়া। দ্বিতীয়ত, পুকুরের জলে এবং স্পঞ্জে থাকা ভারী ধাতুর পরিমাণ সমান নয়। পুকুরের জলের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ভারী ধাতু (আর্সেনিক, জিঙ্ক, লোহা, তামা, সীসা, ক্যাডমিয়াম এবং ক্রোমিয়াম) রয়েছে স্পঞ্জে। তখনই গবেষকদের ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, নিশ্চিতভাবে স্পঞ্জ পুকুরের জলে মিশে থাকা ভারী ধাতুগুলিকে শুষে নিচ্ছে। যেন ছাঁকনির মতো কাজ করছে এই স্পঞ্জ। বিজ্ঞানীরা দেখেন, স্পঞ্জ শুধুমাত্র পুকুরের জলের ভারী ধাতুগুলিকে টেনে নিচ্ছে, তা-ই নয়। তাদের শরীরে থাকা বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া (অ্যাটিনো ব্যাকটেরিয়া, প্রোটেও ব্যাকটেরিয়া, সিয়ানো ব্যাকটেরিয়া 

    ইত্যাদি) ওই সব ভারী ধাতুর বিষক্ষয় ঘটাচ্ছে বা বিজ্ঞানীদের পরিভাষায় ডিটক্সিফাই করছে। তাই জলদূষণের মাত্রা অনেকটা কমে যাচ্ছে।

    গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের জাতীয় পোস্ট ডক্টরাল ফেলো ডঃ ধ্রুব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এই গবেষণার দু’টি অত্যন্ত জরুরি জনস্বার্থবাহী ফলাফল রয়েছে। এক, কোনও এলাকার পুকুরের জলে স্পঞ্জের অস্তিত্ব দেখে টের পাওয়া যাবে, সেখানকার জলে ভারী ধাতুর দূষণ ঠিক কোন পর্যায়ে আছে। দুই, স্পঞ্জকে কাজে লাগিয়ে সামগ্রিকভাবে কমানো যাবে জলদূষণ।
  • Link to this news (বর্তমান)