বিএলএ–দের বিরুদ্ধে মৃত ভোটারের নামেও ফর্ম বিলির অভিযোগ, কমিশনের কড়া পদক্ষেপে চাঞ্চল্য
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১০ নভেম্বর ২০২৫
রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধন পর্বে এবার তীব্র বিতর্কের কেন্দ্রে বিএলএ ও বিএলও–দের ভূমিকা। বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে এসেছে একাধিক অভিযোগ। কোথাও চাঁটাই পেতে, কোথাও চায়ের দোকানে বসে, আবার কোথাও তৃণমূল নেতার বাড়িতেই নাকি এনুমারেশন ফর্ম বিলি করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আগেই এই অনিয়মের খবর পেয়েছিল। কিন্তু নতুন অভিযোগ আরও বিপজ্জনক। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অর্থাৎ বিএলএ–রা নাকি মৃত ভোটারদের নামেও ফর্ম বিলি করতে বিএলও–দের জোর করেছেন। মোট আট জন বিএলএ–র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এসেছে, ইতিমধ্যেই তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
সূত্রের দাবি, অভিযোগে নাম থাকা অধিকাংশই শাসকদলেরই বিএলএ। কমিশন এই মুহূর্তে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ শুরু করেছে। অন্য দিকে বিরোধী দলগুলো— বিশেষত বিজেপি ও বাম শিবির অভিযোগ তুলেছে আরও তিনটি বিষয়ে। তাঁদের বক্তব্য, শাসকদলের বিএলএ–রা নাকি অন্যান্য দলের প্রতিনিধিদের এলাকায় ঢুকতেই দিচ্ছেন না।
এই অবস্থায় ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া অভিজিৎ দাস (ববি) সামাজিক মাধ্যমে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, ফলতার এক তৃণমূল নেতা ‘জাহাঙ্গির’ নাকি নির্দেশ দিয়েছেন, বিএলও–দের ফোন বন্ধ রাখতে হবে এবং কোনও মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। এই অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে নতুন করে উত্তাপ বাড়িয়েছে।
বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কমিশন যখন বলল এসআইআর করতে, ওরা বলল মানি না। এখন এসআইআর নিয়ে চলছে জোয়াচুরি। মৃত মানুষের নামও রাখতে চাইছে। ২০০২ সালের পরে যাঁরা রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে রাজ্যে ঢুকেছেন, তাঁদের নাকি ফেক জন্ম সনদ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের নামও রাখা হচ্ছে।’
তবে শাসকদল সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘এখনও সাহিত্য রচনা চলছে। বিহারে বহু মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁরা ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের কাছে গিয়ে বলেছিলেন, আমরা মৃত হলে আমাদের মৃত্যু সনদ কোথায়? সুপ্রিম কোর্টেও তাঁরা একই প্রশ্ন করেছিলেন।’
নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জেলার রিটার্নিং অফিসারদের রিপোর্ট তলব করেছে। মৃত ভোটারের নামে ফর্ম বিলি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিএলএ–দের আচরণ— সব দিক খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কমিশন সূত্রের খবর, ভোটার তালিকা কারচুপি করার যে কোনও প্রচেষ্টা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।