• মিথ্যা প্রচারের নালিশ শুভেন্দুর, কল্যাণের হুঁশিয়ারি ‘দেখে নেব’
    আনন্দবাজার | ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে শাসক-বিরোধীর তরজার স্বর আরও চড়ল। এসআইআর নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ফের ‘মিথ্যা প্রচারে’র অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। উল্টো দিকে, এসআইআর-এর প্রভাবে বিজেপি হিন্দু-ভোট হারাবে বলে ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছে তৃণমূল! সেই সঙ্গে, এসআইআর নিয়ে নির্বাচন কমিশন, বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘দেখে নেওয়া’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

    বিরোধী দলনেতা রবিবার বর্ধমানে বলেছেন, “আগেও এসআইআর হয়েছে। এত মিথ্যা প্রচার কেউ করেনি। তৃণমূলের হাবভাব, তাতে যেন কমিশন দেশবিরোধী। মৃত, ভুয়ো, বহিরাগতদের নাম পাওয়া রয়েছে। ভারতীয় মুসলিমদের সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু অনুপ্রবেশকারী এক জন মুসলিমের নামও ভোটার তালিকায় থাকতে দেব না।”

    এই প্রেক্ষিতে বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা চক্রান্তের অভিযোগ তুলে দেশের শীর্ষ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ। তিনি বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা করব। কমিশন, বিজেপি, মোদীকে রাজনৈতিক ও আইনি ভাবে দেখে নেব। বিজেপি যতই চক্রান্ত করুক, কোনও মুসলিম ভোটারের নাম কাটতে দেব না। তাঁরা ভারতেরই নাগরিক।” এর সঙ্গেই ‘ঘটি-বাঙাল’ এক জোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার ডাকও দিয়েছেন তিনি। যদিও, এই হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে উনি (কল্যাণ) সুপ্রিম কোর্টে যত মামলা লড়েছেন, তার সাফল্যের ‘স্ট্রাইক রেট’টা দেখলেই পুরো বিষয়টা বোঝা যাবে!”

    এই অবস্থায় তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ আবার ভোটে এসআইআর-এর ‘প্রভাব’ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন! তিনি বলেছেন, “বিজেপির হিন্দু-মুখোশের আড়লে রাজবংশী থেকে মতুয়া, সবাই বিপদে। বিজেপির নিজের সমীক্ষা, এসআইআর হলে তাদের ১৮.৫০-২১.৩০% ভোট কমে যাবে।” যদিও বিভ্রান্তি তৈরির অভিযোগে পাল্টা তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি শমীকের অভিযোগ, “এসআইআরকে ঢাল করে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে তৃণমূল। যিনি বলেছিলেন, বাংলায় এসআইআর হতে দেব না, সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই গণনাপত্র নিয়েছেন।”

    এ দিকে, অনলাইনে গণনা-পত্র পূরণ করার ক্ষেত্রে সমস্যার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “অনলাইন-ব্যবস্থা জরুরি। কারণ, তৃণমূলের চাপ আছে। কিন্তু কমিশন যা বলেছিল, বাস্তবে তা হচ্ছে না। অনলাইন ফর্মে ভরার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা হচ্ছে।” বিষয়টি নিয়ে আজ, সোমবার কমিশনে চিঠি দেওয়া হবে এবং অনলাইনে গণনা-পত্র পূরণের বিষয়ে জনসাধারণের প্রচার চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন সেলিম। পাশাপাশি, এসআইআর ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিষয়কে সামনে রেখে তৈরি ‘অনিশ্চয়তা’র প্রেক্ষিতে দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেছেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রতিনিধিরা। অধীরের আশ্বাস, “এক জন বৈধ ভোটারের নামও বাদ দিতে দেওয়া হবে না। রাস্তা, সংসদ থেকে আদালত— কংগ্রেস সর্বত্র লড়বে। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের কাছে আর্জি, বিভ্রান্ত হবেন না।” তাঁদের সমস্যা যাতে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরা হয়, সে জন্য অধীরের কাছে দাবিপত্রও তুলে দিয়েছেন মতুয়া-প্রতিনিধিরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)