• অনুপস্থিত ভোটারের রহস্য ভেদে সমন্বয় অস্ত্র
    আনন্দবাজার | ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • অবৈধ ভাবে এ দেশে ঢোকা বিদেশিদের চিহ্নিত করতে আঞ্চলিক বিদেশি নিবন্ধীকরণ শাখার (ফরেনার্স রিজিয়োনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস বা এফআরআরও) হাত আরও শক্ত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন-সহ কেন্দ্রের অন‍্য সংস্থার সঙ্গেও তাদের সমন্বয় বাড়ছে। চলতি এসআইআর বা ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন পর্বে তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করছেন প্রবীণ আধিকারিকদের একাংশ।

    সেপ্টেম্বরেই বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করার প্রযু্ক্তিতে (ইন্টিগ্রেটেড ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) বলীয়ান হয়েছে এফআরআরও। নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রশ্নে যার মাধ্যমে অন‍্য যে কোনও সংস্থার থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে এসআইআর শুরুর আগেই এফআরআরও-র দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন কয়েক শো ভোটার কার্ড বাতিল করেছে বলে জানা গিয়েছে। এর মধ‍্যে কিছু বাংলাদেশি ও কিছু পাকিস্তানি নাগরিকদের হাতে গিয়েছিল বলে দাবি।

    ঘটনাচক্রে, এসআইআর শুরুর মুখেও উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশে ফিরতে গিয়ে শতাধিক ব্যক্তি সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হন। এ দেশের ভোট প্রক্রিয়ায় শামিল হয়ে ধরা পড়ার ভয় তাঁদের মধ্যে কাজ করছে কী না, সেই প্রশ্নও উঠছে কয়েকটি মহলে।

    এসআইআর পর্বে মোটামুটি চার ধরনের ভোটার খুঁজে বার করা কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। এর মধ‍্যে মৃত (ডেড), ঠিকানা বদলানো (শিফটেড), একই নামে একাধিক (ডুপ্লিকেট) এবং অনুপস্থিত (অ্যাবসেন্ট) ভোটারেরা রয়েছেন। কমিশন কর্তাদের ব্যাখ্যা, প্রথম দু’টি ক্ষেত্রে বিদেশি যোগ পাওয়ার সম্ভাবনা তত নেই। কিন্তু অতীতে কমিশন দেখেছে, এ দেশের ভোটার কার্ডধারী নাগরিকের নাম ব‍্যবহার করে ভোটার কার্ড আদায় করেছেন পড়শি দেশের নাগরিক। আবার কমিশন মনে করছে, নামে নামে যে ফর্মগুলি দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে যেগুলি পূরণ হয়ে ফিরবে না, তাঁরা অনুপস্থিত-ভোটার। তার একটি কারণ হতে পারে, কেউ কর্মসূত্রে বা অন্য কাজে বাইরে রয়েছেন। অথবা অন্য কারণে তিনি সময়ের মধ‍্যে অনলাইন বা কাগজের ফর্ম কোনওটাই ভর্তি করতে পারেননি। তাতে পরেও কমিশনের কাছে আবেদন করার সুযোগ কেউ কাজে লাগাতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলির মনোনীত বিএলএ-রাও এ কাজে সংশ্লিষ্টকে সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু তার পরেও ইচ্ছাকৃত ভাবে এই সুবিধা কেউ কাজে না লাগালে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এই আইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে চাইছেন না! এক কর্তার কথায়, “৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযোগ, দাবি-দাওয়া জানাতে পারবেন ভোটারেরা। কারও নাম বাদ গেলে, তখন তিনি তা জানাতে পারবেন। অনুপস্থিত কেউ থাকলে, আবেদন করতে পারবেন তিনিও। আবার এসআইআরের পরেও নতুন ভাবে তালিকায় নাম তোলার সুযোগ থাকবে। কিন্তু অনুপস্থিত ভোটারের তরফে তখনও এমন আবেদন না এলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”

    সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, তখনই গুরুত্ব বাড়তে পারে এফআরআরও-র। কোনও ভাবে প্রকাশ্যে না আসা অনুপস্থিত ভোটারেরা আদতে বিদেশি কি না, তা দরকারে খতিয়ে দেখতে পারে তারা। অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, কমিশন সরাসরি নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ করতে পারে না। কিন্তু সংবিধানের ৩২৬ ধারা বলছে, একমাত্র এ দেশের নাগরিকেরাই ভোটার হতে পারেন। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের (দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্যা পিপল অ্যাক্ট) ১৬ নম্বর ধারাও বলছে, কোনও ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে, যদি তিনি এ দেশের নাগরিক না হন। সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে সমন্বয় বজায় রাখছে কমিশন এবং এফআরআরও।

    মৃত ভোটারদের চিহ্নিত করতে জেলা প্রশাসনগুলির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছে কমিশন। নজর রাখা হচ্ছে একই নামে একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতির দিকে। বিয়ের সূত্রে ঠিকানা বদল হলেও, পুরনো ঠিকানায় সংশ্লিষ্টের নাম থেকে যাচ্ছে কি না, যাচাই হবে তা-ও। সে ক্ষেত্রে ভোটার কার্ডের জন্য সেই ভোটার যে কোনও একটি ঠিকানা বেছে নিতে পারবেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)