• ছাত্রীদের ক্রিকেট-স্বপ্ন পূরণের পথে এগোচ্ছে বহু স্কুল
    আনন্দবাজার | ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • ২২ গজের পিচে ব্যাট-বল নিয়ে নেমে পড়ার স্বপ্ন অনেক মেয়েরই। তবে, মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে রিচা ঘোষ, শেফালি বর্মা, দীপ্তি শর্মাদের জয়ের পরে সেই স্বপ্ন আরও জোরদার হয়েছে পাপিয়া মণ্ডল, সাবিনা খাতুনদের। তাদের মনে হয়েছে, এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন আর হয়তো অসম্ভব নয়, যদি স্কুলেই ক্রিকেট খেলার পরিকাঠামো থাকে বা স্কুলেই নিয়মিত ক্রিকেট খেলার সুযোগ মেলে। স্কুল কর্তৃপক্ষেরাও জানাচ্ছেন, ব্যাট-বল হাতে মাঠে নামতে ইচ্ছুক ছাত্রীদের জন্য ক্রিকেটের পরিকাঠামো তৈরি করে দিতে তাঁরা আগ্রহী। আবার কিছু স্কুল জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই তাঁদের স্কুলে মেয়েরা ক্রিকেট খেলছে। এমনকি, ক্রিকেটের প্রশিক্ষণও চলছে সেখানে।

    যেমন, ঠাকুরপুকুর এলাকার কলাগাছিয়া কৈলাস কামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চিত্রিতা মজুমদার জানান, ২০২৩ সাল থেকে তাঁদের স্কুলে প্রতি বছর মেয়েদের আন্তঃশ্রেণি ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হয়। এ বারও সেই প্রতিযোগিতা হবে। সেখানে ছাত্রীদের বিনামূল্যে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ দেন মোহনবাগান ক্রিকেট দলের সঙ্গে যুক্ত মনসিজ সিংহ।

    চিত্রিতা বলছেন, ‘‘ভারতের মেয়েরা বিশ্বকাপ জেতার পরে ছাত্রীদের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বহু গুণ বেড়েছে। মেয়েরা এখন ক্রিকেটে এতটাই পারদর্শী যে, সামনের সপ্তাহেই ছেলে বনাম মেয়েদের দলের ম্যাচের পরিকল্পনা করেছি। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। টিফিনের সময়ে ছেলেরাও মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’’

    স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও এ বার ঠাঁই পাচ্ছে ক্রিকেট। চিত্রিতার কথায় ‘‘ভাবছি, আর কী কী পরিকাঠামো তৈরি করা যায়। আমাদের স্কুলের মাঠে ক্রিকেট পিচ তৈরির কথা ভেবেছি। পরিচালন সমিতির কাছে এ নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছি। মনে হয়, পিচ তৈরির কাজ দ্রুত শুরু করতে পারব।’’

    তবে কলকাতার স্কুলগুলির ক্ষেত্রে নিজস্ব মাঠ না থাকা অন্যতম প্রধান সমস্যা। যেমন, ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুস্মিতা বসাক বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের মাঠ নেই, কিন্তু ছাত্রীদের ক্রিকেটে আগ্রহ রয়েছে। কয়েক জন ছাত্রী ঢাকুরিয়ার একটি ক্রিকেট ক্লাবের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী সিএবি-তে খেলার সুযোগও পেয়েছে। এখন আরও অনেকেই ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নিতে চায়।’’

    সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপী‌ঠের প্রধান শিক্ষিকা সর্বাণী সেন জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলেও ক্রিকেট খেলার বড় মাঠ নেই। কিন্তু মেয়েদের ক্রিকেটে উৎসাহ ক্রমশ বাড়ছে। স্কুলের আশপাশে কয়েকটা ক্লাবের মাঠ আছে। ওই সব ক্লাব অনুমতি দিলে সেখানেই স্কুলের ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা ভাবছেন তাঁরা। মাঠ পেলে মেয়েদের ক্রিকেট দল তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের।

    খেলার মাঠের অভাব রয়েছে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন (মেন) ফর গার্লসেও। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বিপাশা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের মেয়েরা রাজ্য স্তরে খেলেছে। তবে ক্রিকেট দল নেই। নিজস্ব মাঠ না থাকলেও স্কুল সংলগ্ন মাঠে প্রশিক্ষণ সম্ভব। আমাদের স্কুলে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমও চালু হওয়ায় পড়ুয়া বেড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ক্রিকেটে উৎসাহী। ওদের জন্য প্রশিক্ষণের পরিকাঠামো তৈরি করতে চাই।’’

    বাঘা যতীন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের স্কুলে খেলার মাঠে ব্যাডমিন্টন, ফুটবল খেলা হয়। এ বার মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে উৎসাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণের কথাও ভাবা হচ্ছে। বিভিন্ন ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাবও আসছে। খেলার মাঠ আছে যোধপুর পার্ক গার্লস স্কুলেও। প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা মণ্ডল সিংহ বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে কয়েক জন খেলে। তবে এখন অনেকেই ক্রিকেট খেলতে চাইছে। চেষ্টা করছি, প্রশিক্ষক রেখে স্কুলের মেয়েদের একটা ক্রিকেট দল তৈরি করার।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)